বাংলাদেশে গ্রেপ্তার ‘কলম্বোর সেই মাদকচক্রের’ পাঁচজন

শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ইতিহাসে বড় মাদকের চালান উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশে তিন তরুণীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। আফগানিস্তানে উৎপাদিত মাদকদ্রব্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে দিতে তারা কাজ করত। আন্তর্জাতিক এই মাদক চোরাচালান চক্রটি মালয়েশিয়ায় বাড়ি ভাড়া করে সেখান থেকে মাদক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছাতো। এজন্য চক্রের সদস্যরা পেত মোটা অঙ্কের টাকা। বিলাসী জীবনযাপনের জন্য তারা এই পথ বেছে নিয়েছিল বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

সোমবার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে তারা গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন। গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন নারী, দুজন পুরুষ। তারা হলেন- ফাতেমা ইমাম তানিয়া, আফসানা মিমি, সালমা সুলতানা, শেখ পারভেজ, রুহুল আমিন ওরফে সায়মন। রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে ১৯শ ৭০ পিস ইয়াবাসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু বৈদশিক মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলাবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে মুফতি মাহমুদ খান জানান, ‘আমরা মাদক পাচারে কয়েকটি রুটের তথ্য পেয়েছি। এগুলো সাধারনত আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান হয়ে শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান-মালয়েশিয়া হয়ে শ্রীলঙ্কায় যেত। এছাড়া মালয়েশিয়া থেকে চায়না হয়ে শ্রীলঙ্কা রুটের কথাও জানা গেছে। চক্রটির দেশে একটি সক্রিয়তা রয়েছে। যার নেতৃত্বে আরিফ ও রেহানা নামে দুইজন রয়েছে। বর্তমানে রেহানা মাদকসহ চীনে গেপ্তার রয়েছেন এবং আরিফ বিদেশে পলাতক।’

মুফতি বলেন, ‘মাদকগুলো আফগানিস্তান-পাকিস্তান হয়ে অন্যান্য দেশ ঘুরে শ্রীলঙ্কা গেলেও রুট হিসেবে বাংলাদেশ ব্যবহৃত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। আটক পাঁচজনের মধ্যে চারজনই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে গিয়ে মাদক চালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গ্রুপটি দেশের অভ্যন্তরে ইয়াবা পাচার সিন্ডিকেটের সঙ্গেও জড়িত। তাদের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমের বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে।’

গত ৩১ ডিসেম্বর কলম্বোর কাছে দেহিওয়ালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৭২ কেজি হেরোইন ও ৫ কেজি কোকেন উদ্ধার করে পুলিশ নারকোটিক ব্যুরো ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। এটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে জব্দ করা মাদকের সবচেয়ে বড় চালান বলে দাবি করেছিল শ্রীলঙ্কা।

প্রায় তিন বিলিয়ন সিংহলি রুপি অর্থাৎ বাংলাদেশি ১৫২ কোটি টাকা দামের ওই মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি দুই বাংলাদেশিকেও সেসময় গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের একজন বগুড়ার মোহাম্মদ জামালউদ্দিন, অন্যজন জয়পুরহাটের দেওয়ান রফিউল ইসলাম।

এরপর চলতি মাসের মাঝামাঝি কলম্বোর একই এলাক থেকে ৩২ কেজি হেরোইনসহ সূর্যমণি নামে আরেক বাংলাদেশি নারীকে গ্রেপ্তারের খবর জানায় শ্রীলঙ্কার সংবাদ মাধ্যম।

মাদক উদ্ধারের ঘটনায় শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়। কলম্বোয় বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ সে সময় সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এরপর তদন্তে নেমে ৫ জানুয়ারি উত্তরার এক বাড়ি থেকে চয়েজ রহমান নামে একজনকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।