বাঘারপাড়ার খাজুরায় বিদ্যালয়ের মাঠে ইজিবাইক স্টান্ড ও পশুহাট!

প্রধান ফটকের সামনে থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের মাঠে অনেকগুলো ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান) ও ভ্রাম্যমান দোকান। সপ্তাহের দু’দিন বসছে হাট। এগুলোর গাঁ ঘেঁষে এঁকেবেঁকে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে। অনেক সময় ক্রেতা-বিক্রেতা ও চালকদের আচরণে তারা অস্বস্তিতে পড়ছে। বিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার সময়ও একই পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর না থাকায় বিদ্যালয়ের মাঠ দিয়ে চলাচল করছে পথচারীরা। হরহামেশাই চলছে দ্রুতগামী মটর সাইকেল ও বাইসাইকেল। এতে নিয়মিত দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের পাঠদান ও পরিবেশ। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার টিপিএম খাজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

এর পাশেই খাজুরা মাখনবালা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও নাজুক। এখানেও সীমানা প্রাচীর না থাকায় বাইরের লোক এসে মেয়েদের ওয়াশরুম ব্যবহার করছে। এতে তাদের সর্বদা ভয় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে হচ্ছে। শিকার হচ্ছে বিব্রতকর পরিস্থিতির। বিদ্যালয়ের পাশেই ওয়াকওয়েতে ফেলা ময়লা-আজর্বনা গন্ধ বাতাসে ধেয়ে আসছে। ফলে জানালা দরজা বন্ধ করেই ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

টিপিএম খাজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দশরত কুমার জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ সপ্তাহের দু’দিন (রোববার ও বৃহস্পতিবার) বিদ্যালয়ে মাঠে হাট বসানো হয়। এর মধ্যে রোববারে বসে পশু (ছাগলের) হাট। তবে এ বছর এখানে আর হাট না বসে সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গেল বছরের জুলাইতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শন করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সীমানা প্রাচীরের চাহিদা পাঠাতে বললেও আজ কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সীমানা প্রাচীর না থাকায় বর্তমানে বিদ্যালয়ে মাঠ দখলে করে গড়ে ইজিবাইক স্টান্ড ও ভ্রাম্যমান দোকান গড়ে উঠেছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক’দিন আগেই দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী বিশ্বাস মোটরসাইকেলের দূর্ঘটনার শিকার হয়। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে ও ছুলে যায়।
দ্বিতীয় শ্রেণীর আল ফাহাদ জানায়, তারা খেলতে পারে না। বল ইজিবাইকের ও দিকে গেলে চালকেরা বকা দেয়।

পঞ্চম শ্রেণীর সামিয়া নুর জানায়, বিদ্যালয়ের মাঠ দিয়ে দ্রুতগামী নছিমন (তিন চাকার ইঞ্জিনচালিত গাড়ি) মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল চলায় তাদের ক্লাসের বাইরে বের হতে ভয় লাগে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে খাজুরা মাখলবালা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান জানান, বিদ্যালয়ের পশ্চিমে চিত্রা নদীর পাড় ঘেষা ওয়াকওয়েতে খাজুরা বাজারের সকল ময়ল আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। যার দূর্গন্ধে স্কুলে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করেই ক্লাস নিতে হচ্ছে। একদিকে ওয়াকওয়েটি পথচারীরাও ব্যবহার করতে পারছে না। অন্যদিকে সীমানা প্রাচীর না থাকায় তারা হরহামেশাই বিদ্যালয়ে মাঠ ব্যবহার করছে।

নবম শ্রেণীর ছাত্রী ইমা পোদ্দার ও মুক্তা খাতুন জানায়, সীমানা প্রাচীর না থাকায় পথচারী ও বাজারের লোকজন তাদের ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। সব সময় তাদের ভয় নিয়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হয়।

এ ব্যাপারে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ জানান, হাট না বসার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার কাছে একটি আবেদন করেছে। এ সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। এখানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা গেলে সব সমস্যার সমাধান হবে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সীমানা প্রাচীরের নির্মাণের ব্যাপারে অবহিত করা হবে।