মাস্ক ব্যবহার না করায় মণিরামপুরে চার বৃদ্ধকে কানে ধরালেন এসিল্যান্ড!

মাস্ক মুখে না পরে রাস্তায় বের হওয়ার অপরাধে যশোরের মণিরামপুরে চার বৃদ্ধকে কানে ধরিয়েছেন এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান। শুধু কানে ধরিয়ে ক্ষান্ত হননি, নিজের মোবাইলে সেই ছবি ধারণ করেছেন তিনি। শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে অভিযানে বেরিয়ে এই সাজা দেন এসিল্যান্ড।

কানে ধরানো চার জনের মধ্যে ৭০-৭৫ বয়সী এক ভ্যান চালক, ষাটোর্ধ দুই তরকারি বিক্রেতা রয়েছেন। অপরজনকে তিনি কানে ধরিয়ে উঠবস করিয়েছেন।

চার বৃদ্ধকে কানে ধরানো এবং উঠবস করানো ৩টি ছবি শুক্রবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয়টি অমানবিক ও দৃষ্টিকটু উল্লেখ করে এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসানের শাস্তি দাবি করেছেন অসংখ্য মানুষ।

মাস্ক ব্যবহার না করায় বৃদ্ধদের কানে ধরানোর বিষয়টি আইন সম্মত বলে নিজেই দাবী করেছেন এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান। আবার কেউকেউ এই কাজকে সঠিক বলছেন।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মণিরামপুরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হয়ে আইন মেনে সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানাচ্ছেন তারা। বিষয়টি তদারকিতে বেশ তৎপরও প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেলে উপজেলার শ্যামকুড়, নেহালপুর, মনোহরপুর ও কপালিয়া এলাকায় অভিযানে বের হন এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান।

অভিযানকালে চিনাটোলা বাজারে ৭০-৭৫ বছর বয়সী এক ভ্যান চালক সামনে পড়েন এসিল্যান্ডের। তখন মাস্ক না পরায় ওই বৃদ্ধকে কানে ধরিয়ে শাস্তি দেন তিনি। একই সময়ে ওই বাজারে তরকারি বিক্রি করতে আসা দুই ষাটোর্ধ বৃদ্ধকে একই অপরাধে একত্রে দাঁড় করিয়ে কানে ধরান তিনি। ওই দৃশ্য দুটি নিজের মোবাইলে ধারণও করেন এসিল্যান্ড। এসময় স্থানীয় যুবলীগ নেতা আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন।

এরপর নেহালপুর এলাকায় একটি বাজারে হতদরিদ্র এক দিনমজুরকে মাস্ক না পরার অপরাধে কানে ধরিয়ে উঠবস করান এসিল্যান্ড। আর সেই ছবিটি নিজের ফেসবুকে ছেড়েছেন ওই ইউপির কামরুজ্জামান নামে এক ইউপি সদস্য।

আবুল কালাম ও কামরুজ্জামান এসিল্যান্ডের কাজটিকে সময় উপযোগী বলে মন্তব্য করেছেন। আবুল কালাম বলেন, এসিল্যান্ড কাজটি ঠিক করেছেন।

এদিকে এসিল্যান্ডের এমন কাজকে কাণ্ডজ্ঞানহীন বলে মন্তব্য করছেন জনপ্রতিনিধিরা।
শ্যামকুড় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, এটা দুঃখজনক। এসিল্যান্ড মোটেও কাজটা ঠিক করেননি।

মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি এসিল্যান্ডের এই কাজকে কোনভাবেই সমর্থন করি না।

জানতে চাইলে এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান কানে ধরানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তাদেরকে মাস্ক ব্যবহার না করার কারণ জিজ্ঞেস করেছি তারা জবাব দিতে পারেনি। তাই কানে ধরিয়েছি। কাউকে উঠবস করানো হয়নি। কানে ধরানোর বিষয়টি সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, দমন ও নির্মূল) আইন ২০১৮ মতে সঠিক বলে দাবি করেছেন তিনি।

এই বিষয়ে জানতে ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সরকারি নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, এসিল্যান্ড কেন একাজ করেছে, সেটা তার কাছে জিজ্ঞেস করেন।