বাড়িভাড়া দিতে পারছে না লাখ লাখ মার্কিনি

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে নিউইয়র্কের বাসিন্দা ব্রিটানি ব্রুক গত ১৬ মার্চ চাকরি হারান। এর ঠিক দুই দিন পর চাকরি চলে যায় তার স্বামী ম্যাথিউ হোয়াইটফিল্ডেরও। অথচ মার্চ মাস শেষে ১ এপ্রিল তাদের হাতে এসেছে বাড়িভাড়াসহ বেশকিছু বিল। ব্রিটানি একটি বিদ্যালয়ে সঙ্গীতের শিক্ষক ছিলেন। অন্যদিকে ম্যাথিউ অভিনয়ের পাশাপাশি করতেন ওয়েটারের কাজ।

কিন্তু বর্তমানে তারা দুজনই চাকরিচ্যুত হওয়ায় বিল পরিশোধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। শুধু এ দু’জনই নন, নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের মতো চাকরি হারিয়ে বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য বিল দিতে পারছেন না সব শ্রেণির কয়েক লাখ মানুষ। হঠাৎ করেই তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন পুরোপুরি উল্টে গেছে বলে জানিয়েছে এএফপি। দেশটিতে চাকরি হারিয়ে বেকারত্ব ভাতার জন্য আবেদন করেছেন সাড়ে ৬৬ লাখ মানুষ।

৩১ বছর বয়সী ব্রিটানি বলেন, ‘বিয়ের পর এই প্রথম আমরা আমাদের ক্রেডিট কার্ডের পুরো ব্যালান্স পরিশোধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একইসঙ্গে সুদ কমানোর অনুরোধ করেছি।’ তাছাড়া এ দম্পতি তাদের শিক্ষাঋণ পরিশোধের সময় পিছিয়ে দেয়ার পাশাপাশি তা কমানোরও আবেদন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা শুধু বিদ্যুতের মতো অতি জরুরি কিছু বিল পরিশোধ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা বাড়িভাড়াও পরিশোধ করব না। কারণ সব বিল দিতে গেলে আমাদের সঞ্চয় ও জরুরি তহবিলের অর্থ কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। নিউইয়র্কে ব্রিটানি ও ম্যাথিউ যে এককক্ষের অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, সেটির মাসিক ভাড়া ১ হাজার ৬৯০ ডলার (এক লাখ ৪৪ হাজার টাকা)।

আবাসন খাতের বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারী সংস্থা আমহার্স্টের তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ২৬ শতাংশ ভাড়াটিয়ার বাড়িভাড়া পরিশোধে সাময়িক অর্থ সহায়তার প্রয়োজন হবে। প্রতি মাসে যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তবে প্রত্যেক আমেরিকানকে ১ হাজার ২০০ ডলারের চেক ও প্রত্যেক শিশুকে যে ৫০০ ডলার করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা এপ্রিলের দ্বিতীয় ভাগের আগে প্রদান করা সম্ভব হবে না।

হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও বৃহৎ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার ভাতার জন্য ২১ মার্চ পর্যন্ত আবেদন করেছে সাড়ে ৬৬ লাখ আমেরিকান নাগরিক। নিউইয়র্কের অলবেনিতে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন ট্যামি ডেভিটো। তিনি ১২ মার্চ চাকরিচ্যুত হন। এ অবস্থায় তিনি সপ্তাহে ২৫০-৩০০ ডলারের বেকার ভাতা আশা করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হল- এ পরিমাণ অর্থ তার জীবনযাপন বিশেষ করে টেলিফোন, বিদ্যুৎ ও ক্যাবল বিল এবং বাড়িভাড়া ও গাড়ির ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট নয়। বাধ্য হয়ে ট্যামি অনলাইনে অনুদান সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

৩১ মার্চ পর্যন্ত তিনি ‘গো ফান্ড মি’ নামের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে ২ হাজার ২৪০ ডলার পেয়েছেন। ট্যামি বলেন, আমি ভিক্ষায় অভ্যস্ত নই। কিন্তু এখন আমার প্রার্থনা ও ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

মূলত বিপুলসংখ্যক কর্মীকে ছাঁটাই ও বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে ১ এপ্রিল নিয়মিত পেমেন্ট পায়নি মর্টগেজ কোম্পানিগুলো। তবে কিছু অঞ্চলে ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এপ্রিলে ভাড়া স্থগিত রাখতে জনমত গড়ে উঠছে।

ক্রুস ম্যাকনিলেজ নামে এক রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার জানান, তিনি তার ভাড়াটিয়াদের জন্য দুই বা তিন মাসের ভাড়া কিছুটা কম করবেন। হয়তো তিনি নির্ধারিত ভাড়ার ৭০ শতাংশ চাইবেন। তার পক্ষে এর বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। ভাড়া না পেলে তার বাড়িগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবে। কারণ তাকেও মর্টগেজের পেমেন্ট পরিশোধ করতে হবে। বাড়ি ভাড়াটিয়াদের মতোই বৃহৎ কোম্পানি নাইক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র কেক প্রস্তুতকারী কোম্পানিও ভাড়া দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে।