ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুধর্ষ চুরির ঘটনার তিন মাস পর প্রকাশ্যে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল কমিটি ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ধামাচাপা দিলেও শেষমেষ ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়।
এ ঘটনায় গত মাসে মামলা দায়ের হয়। মামলার পর স্কুলের নৈশপ্রহরী ও সহায়ক কর্মচারীকে আটক করে পুলিশ। শুরু হয় পুলিশি তদন্ত। তদন্ত শুরুর পরই চুরি যাওয়া মালামাল কিনে স্কুলে জমা করেছেন প্রধান শিক্ষক। মালামাল কিনতে শিক্ষকদের কাছ থেকে তোলা হয়েছে চাঁদা। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানামুখি সমালোচনা।
জানা গেছে, গত বছরের ১১ নভেম্বর হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভালকী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। রাতের আঁধারে স্কুলের ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়। চুরি যাওয়া মালামালের আনুমানিক মূল্য এক লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের একাধিক শিক্ষক জানান, চুরির ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক ভাবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক খালেদুর রহমান খালেক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করেন। স্কুলের অন্য শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে চাপাচাপি শুরু করলে ঘটনার আড়াই মাস পরে মামলা করেন প্রধান শিক্ষক। মামলা নং- ১৫/৪১। মামলায় স্কুলের নৈশপ্রহরী নাইম ও সহায়ক কর্মচারী বাবলুর রহমানকে আসামী করা হয়। মামলার পরে দুই আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে আসামিরা জামিনে মুক্ত আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, চুরির ঘটনায় নৈশপ্রহরী ও সহায়ক কর্মচারী জড়িত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, চুরি যাওয়া মালামাল যেই ঘরে ছিল, চুরি সংঘটিত হওয়ার পর সেই ঘর তালাবদ্ধই পাওয়া যায়। আর ওই ঘরের চাবি নৈশপ্রহরী বা সহায়ক কর্মচারীর কাছে থাকে না। এছাড়া ঘটনার আড়াই মাস পরে মামলা দেয়া নিয়েও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা ধামাচাপ দেয়া ও দীর্ঘ সময় পরে মামলা দায়েরের ঘটনায় শুরু হয়েছে সমালোচনা। সেই সাথে মামলা দায়েরের পর ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেছে হরিণাকুন্ডু থানা পুলিশ।
তদন্ত শুরুর পরই চুরি যাওয়া মালামাল নিজ উদ্যোগে কিনে স্কুলে জমা করেছেন প্রধান শিক্ষক খালেদুর রহমান খালেক। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে চাঁদা তুলে কেনা হয়েছে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, সিসি ক্যামেরা, স্মার্ট টিভি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মামলার তদন্ত শুরুর পরপরই তড়িঘড়ি করে চুরি যাওয়া মালামাল কেনার ঘটনায় নতুন করে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। প্রধান শিক্ষকের এমন উদ্যোগকে অস্বাভাবিক মনে করছেন স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়রা।
অভিভাবকরা বলছেন, স্কুলের মালামাল চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিজ উদ্যোগে কেন চাঁদা তুলে মালামাল কিনলেন? বিষয়টি রহস্যজনক। মামলার তদন্ত ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতেই প্রধান শিক্ষক আগেভাগেই মালামাল কিনে জমা করেছেন। চুরির ঘটনায় তিনি জড়িত কিনা তা নিয়েও নানা জল্পনা শুরু হয়েছে।
হরিণাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমআর রউফ বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আমরা আদালতে বিস্তারিত জানাবো। তদন্তাধীন বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভালকী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদুর রহমান খালেক বলেন, আমার স্কুলের মালামাল হারিয়ে গেছে। এই জিনিসগুলো স্কুলে দরকার। চুরির মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার সময় সাপেক্ষ্য ব্যাপার। নতুন করে আবার কবে এসব জিনিস পাবো তার ঠিক নেই। তাই, সকল শিক্ষকের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে এনেছি। এ বিষয় নিয়ে অন্য ভাবে ভাবার তো কিছু দেখিনা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী বলেন, চুরির ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে এ ঘটনাকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু মামলা হয়েছে, আশাকরি সত্যটা বেরিয়ে আসবে।
হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম তারেকুজ্জামান বলেন, চুরির ঘটনা জানার পরই মামলা করার জন্য প্রধান শিক্ষককে পরামর্শ দিই। মামলা করতে কেন বিলম্ব হয়েছে সেটা প্রধান শিক্ষক বলতে পারবেন। মামলায় কি অভিযোগ দেয়া হয়েছে, সেটা আদালতে প্রমাণ করবেন বাদি। এ ঘটনায় নিরীহ কেউ যেন হয়রানি শিকার না হয়, সে বিষয়টি আমি দেখব।