আমানত-ঋণ প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে ইসলামিক ব্যাংকিং

islami bank bdডেস্ক রিপোর্ট: প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকিং আমানত ও ঋণে উচ্চ প্রবৃদ্ধি। ২০১৭ সালে প্রচলিত ব্যাংকে ঋণের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশ। সেখানে ইসলামিক ব্যাংকিং ঋণের প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ। একইভাবে আমানতেরও প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেশি। প্রচলিত একই সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সেখানে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

সোমবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ইসলামিক ব্যাংকিং অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

স্বাগত বক্তব্যে আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তিনি ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধির চেয়ে কমপ্লায়েন্সের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেন। কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর।

রাজী হাসান বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যাংকগুলোকে আলাদা সেল করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব ধরনের কমল্পায়েন্স বজায় রেখে এবং শরিয়াহ’র মূল নীতি বজায় রেখে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

তিনি বলেন, সকল ইসলামিক ব্যাংক বা শাখায় শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে শরিয়াহ বোর্ড করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের পরামর্শক এম. আজিজুল হক বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ধারণা ঠিক না করেই ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ ইসলামিক ব্যাংকিং অনেক দূর এগিয়েছে। বাংলাদেশেরও ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য ব্যাংকারদের এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ জরুরি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে পরিসর অনেক বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দক্ষ জনবল না থাকায় সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিশেষ সার্টিফিকেশন কোর্স চালু করতে হবে। যেখানে ব্যাংকারদের ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। এসব সার্টিফিকেটধারী অভিজ্ঞ ব্যাংকার পদন্নোতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ পাবে।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের রিবার বিষয়টি আরও বিশ্লেষণ করার সুযোগ রয়েছে। কারণ রিবা এবং সুদের বিষয়ে অনেকে আপত্তি তোলেন।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জন্য অনেক সার্কুলার আছে। কিন্তু কোনো ধরনের আইন নেই। আইন থাকলে পরিপূর্ণ কার্যক্রমে সহায়ক হয়। নতুন নতুন পণ্য এনে ইসলামিক ব্যাংকিং গ্রাহকদের কাছে আরও জনপ্রিয় করার সুযোগ রয়েছে।

এক্সিম ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্য সংকট দূর করা যত সহজ প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তা সম্ভব নয়। তিনি ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর জোরারোপ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং এখন ধর্মীয় বিষয়ের মধ্যে আবদ্ধ নেই। মালয়েশিয়ার ৬০ শতাংশ গ্রাহক ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক। অনেক বিদেশি ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে সাফল্য পেয়েছে। সুতরাং দক্ষতার সঙ্গে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের সুযোগ রয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড.শাহ মো. আহসান হাবীব প্রমুখ।