প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান বিএনপির

bnp logoঢাকা: ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের স্বার্থে নয় বলে দাবি করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করে দলটির নেতারা বলেছেন, সরকার ঋণনির্ভর একটি বাজেট দিয়েছে। এতে জনগণের ওপরে ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। এই বাজেট জনগণের কোনো উপকারে আসবে না।

বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট উপস্থাপনের পর বিএনপি নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়ার এসব কথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এটি জনগণের স্বার্থে বাজেট নয়। সরকার ঋণনির্ভর একটি বাজেট দিয়েছে। এতে জনগণের ওপরে ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। এই বাজেট জনগণের কোনো উপকারে আসবে না। আমরা এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করছি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনের মুক্তি ভবনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আয়োজনে ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানের পরিচালনায় ইফতারে ২০ দলীয় জোট ও বিএনপির সিনিয়র নেতারা অংশ নেন।

মোশাররফ হোসেন বলেন, এত বড় ঘাটতি একটা বিশাল বাজেট দেয়া হয়েছে শুধু জনগণের থেকে প্রতারণা করে ভোট আকর্ষণ করার জন্য। এটি নির্বাচনী বাজেট, ভোট আকর্ষণের বাজেট, জনগণের স্বার্থে বাজেট নয়।

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক মন্ত্রী বলেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের আর্থিক সক্ষমতা নেই। প্রশাসনিক দক্ষতাও নেই। বাজেট কোনো অবস্থাতে বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এটা লোক দেখানো বাজেট, জনগণকে প্রতারণা করার বাজেট।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘ঋণনির্ভর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে জনগণের ওপর ঋণের বোঝা বৃদ্ধি হবে এবং দেশে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাবে। সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। রাজস্ব ঘাটতি পূরণের জন্য দায়িত্ব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপরে। প্রত্যেকের পকেট থেকে এই ঘাটতি পূরণ করা হবে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আমি হিসাব দিতে চাই বেশকিছু পণ্যের ওপরে স্থানীয় পর্যায়ে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি, ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। তৈরি পোশাকশিল্পে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। অনেক পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা যে ১১০০ ধরনের পন্য আমদানি করি তার ওপরে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। ই-কমার্সকে ভ্যাটের অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এর ফলে ধনীকে আরও ধনী করা হবে এবং দরিদ্র আরও দরিদ্র হবে। আর্থিক খাতের দুরবস্থা থেকে উত্তরণে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো ‘দিকনির্দেশনা’ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, সামাজিক বিভিন্ন খাতে যে নৈরাজ্য চলছে তা নিরসনের প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এটি একটি ফাঁকা বাজেট। বাজেটের যে আকার ও বিশালতা দেখানো হয়েছে এর পেছনে একটা অভিসন্ধি আছে। সত্যিকার অর্থে এই বাজেট নিম্ন আয়ের মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষের উপকারে আসবে না।

‘অর্নব’ সংগঠনের উদ্যোগে বর্তমান সরকারের আমলে ‘গুম-খুনে’ নিহত নেতাকর্মীর পরিবারকে ঈদ উপহার অনুষ্ঠানে মওদুদ আহমদ আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বিশাল একটি বেলুন, নীল রঙের বেলুন। কিন্তু এর ভেতরে কিছু নেই, ফাঁকা। এটি একটি গতানুগতিক বাজেট। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার একটা আপসকামী বাজেট দিয়েছেন। এই সরকারের বাজেট দেয়ার অধিকার আছে কিনা সেটাও একটা বিরাট প্রশ্ন। কারণ এই সংসদের ১৫৪ জন সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। নির্বাচনী বাজেট দিয়ে সরকার জনগণকে ভোলাতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্ণব এর সভানেত্রী বিথিকা বিনতে হোসেইন।

এর আগে দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার বাজেট দেয়ার নামে জনগণের ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করছে। বর্তমান সরকারের বাজেট দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই।

তিনি বলেন, বাজেটের আকার দিয়ে কিছু বোঝা যায় না। বাজেটের আকার বাজেটের মান সম্বন্ধে কিছু বলে না। বাজেটের মান অত্যন্ত নিম্ন। ঢাকা শহরে বড় বড় প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে। এমনকি পদ্মা সেতু প্রজেক্ট প্রথম শুরু হয়েছিল মাত্র সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে। সেই প্রজেক্ট আজ ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। আমরা বলেছি এই প্রজেক্ট শেষ হতে হতে পদ্মা সেতুর বাজেট ৫০ হাজার কোটি টাকা হলেও আমরা অবাক হব না। এতেই প্রমাণিত হয় বাজেটের কোয়ালিটি কী। বাজেট ফুলেফেঁপে বড় হয়েছে। এটা বাজেটের জন্য গৌরবময় কোনো বিষয় নয়। সাইজ দিয়ে কোন বাজেটের কোয়ালিটি নির্ধারিত হয় না। এই বাজেট জনগণকে শোষণ করছে। এই বাজেট একটি ভুয়া বাজেট। এই বাজেট দিয়ে কখনও বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ হবে না।

ঢাকা মহানগর উত্তরের নবগঠিত বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের নিয়ে মাজারে যান আব্দুল মঈন খান। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জু, সহসভাপতি আব্দুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজিএম সামছুল হকসহ বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট হচ্ছে এ সরকারের সর্বশেষ লুটপাটের বাজেট।

তিনি বলেন, বিলাসী বাজেটে প্রকল্প বাড়ানোর উদ্দেশ্যই হলো লুটপাট। শুধু সরকারি দলের নেতাকর্মীদের তুষ্ট করার জন্যই এ বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এ বাজেটে জনমতের কোনো প্রতিফলন নেই। জনগণের কোনো লাভও হবে না। গতানুগতিক ধারায় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের পক্ষে বেলকুচির তামাই হাইস্কুল মাঠে দরিদ্রদের মধ্যে শাড়ি-লুঙ্গি ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। বেলকুচি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আজমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।