সবুজ পতাকা হাতে একজন সাহসী তানজিলা

রাজশাহী প্রতিনিধি: নগরীর রেলগেটের ধারে সবুজ পতাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একজন নারী। কাছে গিয়ে জানা গলে তিনি গেটকিপার তানজিলা খাতুন (২৩)। সবুজ পতাকা নাড়িয়ে নিরাপদ সংকেত দিলেন ট্রেন চালককে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ট্রেনটি নিরাপদে পার হলো।

রবিবার কথা হয় গেটকিপার তানজিলার খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে। এই বছরের ১৬ মে তিনি চাকরি পেয়েছেন গেটকিপার হিসেবে। স্বামী সন্তান নিয়ে রাজশাহী নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। স্বামী মিজানুর রহমান রেল ভবনের আইন শাখায় এমএলএস পদে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া তাঁর মারিয়া বিনতে মিজান নামের চার বছরের সন্তন রয়েছে।

একজন নারী হয়ে কেনো এই পেশায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কাজ তো সবাইকে করতো হয়। একেকজন একেক রকমের কাজ করেন।
রেল লাইনের পশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে তিনি বলেন, কোন সমস্য হয় না। বরং তার আনন্দ লাগে। যে আর পাঁচটা মেয়ে দেখে উৎসাহিত হবে। এর ফলে অনেক নারীরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসবে। এছাড়া তার স্বামী আরো উৎসাহিত করে এই কাজে।

তিনি বলেন, এই পদে চাকরিতে সমস্যা না হলোও রাতের দিকে সদস্য হয় মেয়ে হিসেবে। অনেক সময় গেট ফেলার পরে মানুষ কথা শোনে না। বার উঠিয়ে বা নিচ দিয়ে পরাপার হয়। মেয়ে বলে গুরুত্ব দেয় না। আমরা তো সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ গেটকিপার দিয়েছে। অনেক সময় মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিয়ে লাইন পার হয়। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে।

গেটকিপার তানজিলা খাতুন বলেন, মাসে তার ১০ দিন নাইট ডিউটি পরে। রাত ১০টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত। রাতে নির্জন সময়ে নারী হিসেবে ডিউটি করাটা অনেক সময় সমস্যা হয়। তাই সহকর্মী বা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নেই না। তিনি বাকি সহকর্মীদের বলেছেন দিনের বেলা বেশি ডিউটি করবেন। এতে তার সহকর্মীরা সহায়তা করে না। এর ফলে তাকে রাতেও ডিউটি করতে হয়।

তিনি বলেন, তার চার বছরের শিশু মারিয়াকে নিয়েই তিনি ডিউটি করেন। বাড়িতে কেউ থাকে না। ছোট বাচ্চা একা থাকতে পারবে না। তাই সঙ্গেই রাখি খেলনা দিয়ে। সে গেটকিপারের রুমের মধ্যে খেলে আর আমি বাইরে এসে গেট নামাই। রাস্তা বন্ধ করার জন্য। আমি গর্বিত। আমি নিজে কাজ করি। কারো ওপর নির্ভরশীল নয়।