পানামা-প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা ৭ জনকে দুদকে তলব

dudokডেস্ক রিপোর্ট: পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে তালিকায় নাম আসা বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে নতুন গতি পেয়েছে। তালিকায় নাম ওঠা একজনের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারির পর এবার আরও ৭জনকে তলব করেছে দুদক।

রোববার দুদকের উপ-পরিচালক এসএম আখতার হামিদ ভূঁঞার স্বাক্ষরে এই নোটিশ পাঠানো হয়।

নতুন করে যাদের তলব করা হয়েছে তাদের মধ্যে পানামা পেপারসে নাম ওঠা চারজন রয়েছেন। এরা হলেন গুলশানের ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা, পরিচালক খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম, আক্তার মাহমুদ ও আহমেদ ইসমাইল হোসেন। এই চারজনকে আগামী ১৬ জুলাই দুদকে হাজির হতে নোটিশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে প্যারাডাইস পেপারসের তিনজনকে আগামী ১৭ জুলাই দুদকে হাজির হতে নোটিশ করা হয়েছে। এই তিনজনের মধ্যে একজন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন। এরা হলেন গুলশানের ইন্ট্রিইডিপ গ্রুপের ফারহান ইয়াকুবুর রহমান, বনানী ডিওএইচএসের সেলকন শিপিং কোম্পানির মাহতাবা রহমান ও উত্তরার ডব্লিউএমজি লিমিটেডের এরিক জনসন আনরেস উইলসন।

পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম ওঠা অন্তত ৮২ বাংলাদেশির বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। তবে মাঝে আইনি জটিলতায় কিছুদিন অনুসন্ধান কাজ বন্ধ ছিল।

দেশের বাইরে বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে আইনি জটিলতার মুখে পড়ে দুদক।

পরে পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে অর্থপাচারের তালিকায় নাম আসা বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। তারই অংশ হিসেবে প্রথম দফায় গুলশানের বাসিন্দা শরীফ জহির নামে একজনের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেয় দুদক।

গত ১২ এপ্রিল দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরীর সাক্ষরে পানামা পেপারসের তালিকার শরীফ জহিরকে নোটিশ পাঠানো হয়।

তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম অনন্ত গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। ঠিকানা- বাড়ি-২০, রোড-২৯, গুশলান-২। নোটিশের পর শরীফ জহির দুদকে সম্পদের হিসাব দাখিল করেছেন।

এরপর রোববার ৭ জনকে নোটিশ করা হলো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। দুদকের গণসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য যুগান্তরকে জানান, বিদেশে অবশোর কোম্পানি খুলে ব্যবসার নামে দেশ থেকে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে পানামা ও প্যারাডাইস পেপারর্সে নাম ওঠা বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগসহ তাদের সহায়-সম্পদের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

২০১৬ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) পানামা পেপারসে অর্থ পাচারকারী অন্তত ৫২ জন বাংলাদেশির নাম প্রকাশ করেছিল। গণমাধ্যমে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশের পর দুদক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।

এরই মধ্যে প্যারাডাইস পেপারসে আরও দুটি তালিকা প্রকাশিত হয়। তিন দফায় প্রকাশ পাওয়া তালিকায় ৮২ জনের নাম স্থান পায়।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে না পেরে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্টদের পৃথকভাবে সম্পদের হিসাব চেয় নোটিশ দেয়া হচ্ছে।

দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ পর্যন্ত যাদের নাম পেয়েছি পর্যায়ক্রমে সবার বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান শেষ করব।

ওই কর্মকর্তারা জানান, অনুসন্ধান টিম পানামা পেপারস তালিকার ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ করলে তাদের মধ্যে ১১জন দুদকে এসে বক্তব্য দিয়ে গেছেন। এবার নতুন করে আরও ৭জনকে তলব করে নতুন করে নোটিশ পাঠানো হলো।

পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে উঠে আসা অর্থপাচারের ঘটনা ছাড়াও নানাভাবে দেশ থেকে অর্থপাচারের ঘটনা ঘটছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালেই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯১১ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।

স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। আমদানি-রফতানির সময়ে পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করার মাধ্যমেই এ অর্থের বড় অংশ পাচার করা হয়েছে। গত বছরের ২ মে সংস্থাটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দুদক থেকে তখনও ওই অর্থপাচারের অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়া হয়।