পাবনায় ৫০০ শয্যার হাসপাতালে আনন্দের বন্যা

পাবনা : পাবনাবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত ৫০০ শয্যা পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । এই হাসাপাতাল নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে একদিকে পাবনা মেডিকেল কলেজ প্রাণ ফিরে পাবে এবং অন্যদিকে সম্প্রতি শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া পাবনার চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে-এমনটাই মন্তব্য বিশিষ্টজনদের।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা মেডিকেল কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ক্যাডেট কলেজ, দেশের অন্যতম প্রাচীণ এবং ঐতিহ্যবাহী সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজসহ দেশের নামকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলে হওয়ার কারণে পাবনাকে এখন বলা হয় শিক্ষা নগরী। অথচ এই পাবনায় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা এ এলাকায় খুবই শোচনীয়।

প্রায় ৩০ লাখ জনসাধারনের জন্য জেলা শহরে ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসাপাতাল ও ৮ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে জোড়াতালি দিয়ে।

দেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসাপাতালও চিকিৎসক সংকটে চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এজন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলনের কারণে ১০ বছর আগে পাবনা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলেও প্রয়োজনীয় আরো অনেক অবকাঠামো বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল হয়নি।

এক রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে সেখানকার শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা। তাই পাবনাবাসীর স্বপ্ন ছিল একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। যেখানে মিলবে উন্নত চিকিৎসা, তৈরি হবে বড় বড় চিকিৎসক।

সম্প্রতি পাবনা মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল প্রকল্পের জন্য সরকার ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শনিবার পাবনা পুলিশ লাইনস মাঠে জনসভায় ভাষন দেয়ার আগে ৫০০ বেডের এই পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী আরও ৪৮ প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, এই মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে এ জেলায় চিকিৎসাক্ষেত্রে নব দিগন্তের সূচনা হবে।

এদিকে পাবনাবাসীর দীর্ঘ দিনের একটি গুরুত্বপুর্ণ স্বপ্ন পুরণ হওয়ার খবরে এখন খুশির জোয়ার বইছে পাবনাবাসীর মনেও। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীসহ শহরবাসী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন।

যেভাবে স্বপ্নের শুরু

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে এ প্রকল্প শুরু হয়। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের। এর পরপরই পাবনা মানসিক হাসপাতালের ক্যাম্পাসে চালু হয় পাবনা মেডিকেল কলেজ।

২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মেডিকেল কলেজ ভবন উদ্বোধন করেন। কিন্তু নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল প্রকল্প চালু না হওয়ায় মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ৬ কিলোমিটার দূরে ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে প্রতিদিন প্রাকটিক্যাল ক্লাস করতে হচ্ছে।

২৫০ শয্যার পাবনা সদর হাসপাতালকে পামেক হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সব বিভাগ না থাকায় শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা জিইয়ে রয়েছে। ফলে তাদের যথোপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণও ব্যাহত হচ্ছে। ২০১৫ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম পাবনা সফরে এলে এসব সমস্যার কথা তাকে জানানো হয়।

এরপরই মন্ত্রী ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেন। তারই ফল স্বরুপ গত মে মাসে সরকার ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প একনেকে পাস করেন। এর ফলে এখন মেডিকেল কলেজ ভবনের সঙ্গেই স্থাপিত হতে যাচ্ছে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল।

কলেজের অবকাঠামো

বর্তমানে এই কলেজে প্রায় ৩ শতাধিক দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী এবং ৫০ জন শিক্ষক রয়েছেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হলে জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, এটি হওয়ায় এ এলাকার মানুষের বিশেষ উপকার হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নের সুফল পাবনাবাসী পাচ্ছে।

পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পাবনার মানুষ বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সুফল পেতে শুরু করেছে।

পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, এই মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের মধ্য দিয়ে পাবনাবাসীর চিকিৎসা সেবার নয়া সুযোগ সৃষ্টি হবে, সেবার মান যেমন বাড়বে তেমনি ভাল চিকিৎসক তৈরীতেও ভূমিকা রাখবে।

পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রিয়াজুল হক রেজা যুগান্তরকে বলেন, একনেকে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্য দিয়ে এই কলেজ আবার প্রাণ ফিরে পেল।’

হাসাপাতালের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন প্রক্রিয়াধীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজ মানেই এটাচড হাসাপাতাল। হাতে-কলমে শিক্ষার মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য হাসাপাতাল অত্যন্ত জরুরি। এটাকে একাডেমিক হাসাপাতাল বলা হয়। যেখানে কার্ডিওলোজিসহ আলাদা আলাদা ইউনিটি থাকে।

তিনি আরও বলেন, কিন্ত পাবনা মেডিকেল কলেজে এটাচড হাসাপাতাল না থাকায় ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসাপাতালকে অস্থায়ী হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে,যা একেবারেই জোড়াতালি বলা চলে। কেননা, এখানে আলাদা আলাদা বিভাগ বা ইউনিট নেই।

তিনি বলেন, ৫০০ শয্যার পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিরাট সফলতা আসবে।

পাবনা চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনি বলেন, বৃহত্তর ১৭ জেলার একটি পাবনা। দেরিতে হলেও এই হাসপাতাল পাবনার মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করবে।