‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী ছাড়া আর কেউ কিছু বলেননি’

ডেস্ক রিপোর্ট : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট।

রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান। তিনি এ মামলার প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দীর বিষয়ে শুনানি করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ছাড়া আর কেউ কিছু বলেননি। এ মামলার ১ম অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নুর আহম্মদ যে অনুসন্ধান রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন তার বাইরে। সেই অনুসন্ধান প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুর ভিতরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু ছিলনা।

তিনি অনুসন্ধান রিপোর্টের বাইরে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ব্যাংকের হিসাব খোলাসহ কোনো ডকুমেন্টে খালেদা জিয়ার নাম নেই। প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দি পড়া শেষে সোমবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানিকালে আদালতে এমন দাবি করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান।

সোমবার বেলা দুইটায় খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি শুরু হয়। শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মাদ আলী আদালতে বলেন, এ আপিলের পেপার বুক অসম্পুর্ণ। এ অবস্থায় মামলার শুনানি করা যায় না। পেপার বুকের বিষয়ে সোমবার আদেশ দেবেন মর্মে দিন নির্ধারণ করেন আদালত।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান ও মাসুদ রানা। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম।

এই মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন আবেদনের পর খালেদা জিয়াকে ১২ মার্চ চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর গত ১৬ মে তা বহাল রেখে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চতর আদালত।

পরে খালেদা জিয়া ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল মামলার নিষ্পত্তিতে আপিল বিভাগের আদেশ পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেন। গত বৃহস্পতিবার ওই আবেদন মুলতবি রেখে আপিল বিভাগ বলেছেন, খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ না হলে সময়ের প্রার্থনা বিবেচনা করা হবে। সে পর্যন্ত আবেদনটি স্ট্যান্ড ওভার (মুলতবি) রাখা হয়েছে।

এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ তিনজন কারাবন্দি। বাকি তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। খালেদা জিয়া ছাড়া বাকি দুইজন হলেন-মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।

পলাতক তিনজন হলেন-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকালে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ফেব্রুয়ারি তারা এ আবেদন করেন।

২২ ফেব্রুয়ারি সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করেন। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।

পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। এখন তিন আসামির আপিল ও দুদকের আবেদনের রুল এই আদালতে শুনানি হচ্ছে।