বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স

স্পোর্টস ডেস্ক:  রাশিয়া বিশ্বকাপের চমক ক্রোয়েশিয়া তাদের প্রথম ফাইনালে কোনও পাত্তাই পায়নি ফ্রান্সের কাছে। ক্রোয়েটদের ৪-২ গোলে হারিয়ে ২০ বছর পর বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পেল ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা ব্রাজিলকে হারিয়ে। ২০০৬ সালে ফাইনালে উঠেও ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হেরে যায় লে ব্লুরা। এক যুগ পর আবার শিরোপার লড়াইয়ে উঠে সেই আক্ষেপ মুছে ফেলে দ্বিতীয় শিরোপা জিতলো দিদিয়ের দেশমের দল।

fifa world cup 2018 winnerপ্রথম ১৫ মিনিটে ফ্রান্সকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি, দাপট দেখিয়েছে ক্রোয়েটরা। ফ্রান্সের গ্রিয়েজমান ও কাইলিয়ান এমবাপে বল পায়েই পাননি। ১১ মিনিটে ইভান স্ত্রিনিচের তুলে দেওয়া বল ডিবক্সের মধ্যে ইভান পেরিশিচ পা বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণে নিলেও রাখতে পারেননি। ৪ মিনিট পর বাঁ দিক থেকে বক্সের মধ্যে বল পাঠান। কিন্তু মানজুকিচ বল দখল নেওয়ার আগেই উমতিতি চমৎকারভাবে ফিরিয়ে দেন।

ক্রোয়েশিয়া শুরু থেকে দাপট দেখালেও তাদের আগে গোল করলো ফ্রান্স। ১৮ মিনিটে মার্সেলো ব্রোজোভিচ বক্সের একটু বাইরে গ্রিয়েজমানকে ফাউল করেন। অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড বাঁ পায়ের শট নেন গোলমুখে। সেটা লাফিয়ে হেড করে মাঠের বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন মারিও মানজুকিচ। কিন্তু তার হেড ক্রোয়েট গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচের মাথার উপর দিয়ে জালে ধরা দেয়।

বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে প্রথম আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। তাদের আনন্দ বেশিক্ষণ থাকেনি। ২১ মিনিটে দোমাগোজ ভিদার হেড গোলবারের উপর দিয়ে চলে গেলেও আধা ঘণ্টা হওয়ার আগে গোল শোধ দেয় ক্রোয়েশিয়া। ফ্রি কিক বিপজ্জনক জায়গা এলেও ক্লিয়ার করতে পারেনি ফ্রান্স। প্রথমে মানজুকিচ, তারপর ভিদা বল পায়ে নিয়ে পাস দেন ইভান পেরিশিচকে। একটু সময় নিয়ে বাঁ দিকে গিয়ে বাঁ পায়ের চমৎকার শটে উগো লরিকে পরাস্ত করেন তিনি।

২৮ মিনিটে ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরানো পেরিশিচ ‘খলনায়ক’ হয়ে যান ৩৪ মিনিটে। গ্রিয়েজমানের কর্নার গোলমুখের সামনে স্যামুয়েল উমতিতি হেড নিতে পারেননি। তবে বল বক্সের মধ্যে দাঁড়ানো পেরিশিচের হাতে লাগে। একবারে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি রেফারি। ফরাসি খেলোয়াড়দের আবেদনে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির সহায়তা নেন নেস্তর পিতানা। মাঠের বাইরে বারবার রিপ্লে দেখার পর পেনাল্টির বাঁশি বাজান আর্জেন্টাইন রেফারি। পেনাল্টি কিক নেন গ্রিয়েজমান। তার বাঁ পায়ের নিচু শট সুবাসিচ বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকাতে যান, কিন্তু বল জালে ঢোকে ডান দিক দিয়ে। ৩৮ মিনিটের গোলে আবার এগিয়ে যায় ফরাসিরা।

৪৩ মিনিটে দেহান লভরেনের হাফ ভলি ঠেকিয়ে দেন পল পগবা। দুই মিনিট পর ভিদা লাফিয়ে উঠে হেড নিলেও সমতা ফেরাতে পারেননি। প্রথমার্ধ শেষ হয় ২-১ গোলে। ১৯৭৪ সালের পর প্রথমবার ফাইনালের প্রথমার্ধে হলো ৩ গোল।

বিরতির পর প্রথম লক্ষ্যে শট নেয় ক্রোয়েশিয়া। ৪৮ মিনিটে রেবিচের বাঁ প্রান্ত থেকে নেওয়া শট দুর্দান্ত সেভে মাঠের বাইরে পাঠান লরি। ৫৩ মিনিটে এমবাপেকে রুখে দেন সুবাসিচ। তবে ক্রোয়েট গোলরক্ষককে অসহায় বানিয়ে ৬ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে ফ্রান্স। ৫৯ মিনিটে এমবাপে ক্রোয়েট রক্ষণ চিড়ে ঢুকে যান। তবে তার শট ফিরে আসে পগবার কাছে। ম্যানইউ তারকার লক্ষ্যে শট ভিদার গায়ে ফিরে আসলে আবার শট নেন, এবার সুবাসিচ বল ঠেকাতে নড়ারও সুযোগ পাননি।

দুই গোলের ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েও থেমে থাকেনি ফ্রান্স। ৬৫ মিনিটে লুকাস হের্নান্দেসের অ্যাসিস্টে ২৫ গজ দূর থেকে এমবাপের নিচু স্ট্রাইক ভিদা ব্লক করতে ব্যর্থ হন, আর গোলরক্ষকের কাছ থেকে কোনও বাধা ছাড়া জালে ঢুকে যায় বল।

৬৯ মিনিটে ব্যবধান কমায় ক্রোয়েশিয়া। উমতিতি গোল কিক নেওয়ার সুযোগ দিয়ে লরিকে বল পাঠান মাঝমাঠ থেকে। ফরাসি গোলরক্ষক বল যখন পায়ে পান, ততক্ষণে খুব কাছে চলে এসেছিলেন মানজুকিচ। লরি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে তার দিকেই বল বাড়িয়ে দেন। জুভেন্টাস স্ট্রাইকারের পায়ে লেগে বল ঢোকে জালে।

ম্যাচে ফেরার সুযোগ পেয়ে আক্রমণে ধার বাড়ায় ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ৭৫ ও ৭৭ মিনিটে ভ্রাসালকো ও ইভান রাকিতিচের শট গোলবারের পাশ দিয়ে চলে যায়। আর কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি ক্রোয়েটরা।