শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিদেশে থেকেই বেতনভুক্ত কিলার পুষছেন!

 ডেস্ক রিপোর্ট : চাঁদাবাজি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ক্যাবল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। অতি সম্প্রতি এমনই এক ঘটনার জেরে ঢাকার বাড্ডায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন বিদেশে অবস্থানরত তিন শীর্ষ সন্ত্রাসী। তারা সেখান থেকে এদেশে তাদের ‘বেতনভুক্ত’ কিলারদের দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

বিদেশে বসেই এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দেশে বিশেষ করে ঢাকায় তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা তাদের বেতনভুক্ত সন্ত্রাসীদের দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। তাতে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে হত্যা করা হচ্ছে।

বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে এ রকম তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

কাঁচাবাজার ও ডিশ ব্যবসায় চাঁদাবাজির টাকার ভাগ-বাটোয়ারার জেরেই ফরহাদকে হত্যা করা হয়েছে। আর এই হত্যাকাণ্ডের মূলে রয়েছে বিদেশে অবস্থানরত তিন সন্ত্রাসী- রমজান, মেহেদী ও আশিক। তাদের মধ্যে মেহেদীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বিদেশে অবস্থানরত পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানের সঙ্গে পরামর্শ করে ভারতে অবস্থানরত সন্ত্রাসী আশিক ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মেহেদী সেখান থেকেই ফরহাদ কিলিং মিশন সফল করতে যাবতীয় নির্দেশনা দেয়। নির্দেশ অনুযায়ী ফরহাদকে প্রকাশ্য দিবালোকে মসজিদের বাইরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে হত্যা করে জিসান-মেহেদী-আশিক গ্রুপের বেতনভুক্ত কিলাররা।

ফরহাদ হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিদেশে বসে এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছেও চাঁদাবাজি করছে। ফরহাদ কিলিং মিশন সফল হওয়ার পর তারা আরও এক ব্যবসায়ীকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলে। তা সফল করার আগেই মেহেদীর কিলার বাহিনীর পাঁচ সদস্য ধরা পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের জালে।

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিদেশে বসেই বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করছে। ফরহাদ হত্যার পর তারা আরেকজনকে হত্যার প্ল্যান করেছিল। এই গ্রুপটা বিদেশে বসেই তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি করতে চাচ্ছে। বিদেশে থাকায় তাদের গ্রেফতার করা কঠিন হলেও ওই নেটওয়ার্কের যারা দেশে রয়েছে, আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।

এর আগে শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশান ও শাহআলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফরহাদ হত্যায় জড়িত পাঁচ বেতনভুক্ত খুনিকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তারা হলো- জাকির হোসেন, আরিফ মিয়া, আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও বিল্লাল হোসেন ওরফে রনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান বর্তমানে দুবাইয়ে আছে। মেহেদী যুক্তরাষ্ট্রে আর আশিক ভারতে রয়েছেন। এছাড়া এই গ্রুপের আরও কয়েকজন ফ্রান্স ও সুইডেনে রয়েছে। আশিক আগে একটি রাজনৈতিক দলের ক্যাডার বাহিনীর শীর্ষ নেতা ছিল।

তিনি বলেন, এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর হয়ে দেশের ভেতরে অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে অনেকেই। তাদের মধ্যেই একজন অমিত যে আশিক-মেহেদীর কথিত কমান্ডার হিসেবে দেশে কাজ করতো। অমিতের অধীনে বেশ কয়েকজন বেতনভুক্ত কিলার ছিল যাদের প্রতি মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দেয়া হতো।

অমিত সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার অবর্তমানে আশিক-মেহেদী গ্রুপ এখন এই বেতনভুক্ত গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিদেশে বসেই চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে ইন্ধন যোগাচ্ছে। এলাকার বখাটে, অর্ধশিক্ষিত ছেলেদের কাজে লাগিয়ে আধিপত্য বিস্তার করছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাড্ডা ও আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন সিএনজি-লেগুনা স্ট্যান্ড, ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন স্থাপনা, ফুটপাত, বাজারসহ আরও কয়েকটি খাত থেকে চাঁদাবাজি করে জিসানসহ শীর্ষ এসব সন্ত্রাসীদের কর্মী বাহিনী। হুন্ডিতে তাদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে চাঁদাবাজির টাকা।

শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান গত কয়েক বছর ধরেই একরকম স্থায়ী আস্তানা গেড়েছে দুবাইয়ে। সেখানে দুইটি বড় রেস্টুরেন্ট রয়েছে তার। সেখানে বসেই সহযোগী জাফর, রনি, সেন্টু, স্বপন, মিরাজসহ অন্যদের দিয়ে ঢাকায় ত্রাসের রাজত্ব বজায় রেখেছে জিসান।
মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দুই কর্মকর্তা হত্যা, আনসার সদস্য হত্যা, বাড্ডায় তোবা গ্রুপের এমডির শ্বশুড়সহ চাঞ্চল্যকর অনেক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল এই জিসান।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন দুপুরে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার আলীর মোড় এলাকার পূর্বাঞ্চল ১ নম্বর লেন সংলগ্ন বায়তুস সালাম জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে বের হলে বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সূত্র: পরিবর্তন ডট কম