নদীরক্ষার পিলারই সবার আগে গেল নদীর পেটে

খাগড়াছড়ি : পার্বত্য খাগড়াছড়িতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই নদীতে বিলীন হয়েছে নদী রক্ষার আরসিসি পিলার ও প্রতিরোধক দেয়াল। কাজ শুরুর মাঝপথেই বিলীন হচ্ছে যে প্রকল্প সেটি কী করে গ্রাম রক্ষা করবে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে।

তবে ‘প্রকৌশল বিভাগের ভুলে এটি হয়েছে’ স্থানীয়দের এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে নদীর স্রোত ও নদী পাড়ের মাটি ধসকেই দায়ী করেছেন পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী তরুন কান্তি দাশ।

জানা গেছে, চেঙ্গী নদী ও আশপাশের বসতি রক্ষায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সিএইচটিআরডিপি-২ প্রকল্পের আওতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থয়ানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানছড়ি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ লাখ টাকা। এখন সেই টাকা জলে গেল।

তবে প্রকল্পের ৬০ লাখ টাকা জলে যাওয়ার পর বোধদয় হয়েছে কর্তৃপক্ষের। এখন চেঙ্গী নদী রক্ষায় বড় আকারে স্কিম নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন এলজিইডির শীর্ষ কর্মকর্তা।

চলতি বছরের ২ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে ১২ অক্টোবর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও মে মাস নাগাদ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ চলাকালীন নদীর রক্ষার প্রতিরোধ দেয়াল চেঙ্গী নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পার্বত্য খাগড়াছড়ির পানছড়ির উত্তর শান্তিপুর এলাকায় চেঙ্গী নদী ভাঙন রোধে উদ্যোগ নেয় সরকার। হক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেলেও সুকুমার দাশ নামে স্থানীয় এক ঠিকাদার কাজটি করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভাঙন কবলিত এলাকায় ১৪ ফুট দীর্ঘ আরসিসি (জমানো কংক্রিট) পিলার এবং আরসিসি পিলারের উপর লংবীমও বসানো হয়েছে। প্রায় ৫০০ ফুট দীর্ঘ লংবীমের অর্ধেকের বেশি অংশ চেঙ্গীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও লংবীমের সঙ্গে লাগোয়ো প্রতিরোধক দেয়ালও হারিয়ে গেছে চেঙ্গীর বুকে।

পানছড়ির উত্তর শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিতা চাকমা জানান, চেঙ্গী নদী রক্ষার কাজ শুরু করার পরপরই তা নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীর যে অংশে ভাঙন ছিল না, আরসিসি পিলারের জন্য সেখানে খনন করায় নতুন করে সেখানেও ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারলে গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশাঙ্কা করছেন এ অধিবাসী।

উল্টাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খোকন কান্তি চাকমা জানান, যেখানে ২০-২৫ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় সেখানে ১৩-১৪ ফুটের আরসিসি পিলার দিয়ে নদী রক্ষা করার চেষ্টা হাস্যকর। তার মতে এ প্রকল্প দিয়ে চেঙ্গী নদীর ভাঙন রোধ সম্ভব নয়। এ কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার লাভবান হলেও সরকারের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি গ্রামবাসী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে।

এ বিষয়ে পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী তরুন কান্তি দাশ জানান, ‘ল্যান্ড স্লাইড কিংবা ধসের কারণে প্রকল্পের প্রতিরোধক দেয়াল নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে ব্লক দেওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে আবার কাজ শুরু করা হবে।

চেঙ্গী নদীর নির্মাণাধীন প্রকল্প বিলীন হওয়া প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আদনান আখতার উল আলম জানান,‘নদীর স্রোতের কারণে কিছু অংশ বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে আলাদা স্কিম নিয়ে কাজ করতে হবে। এটি অস্থায়ীভাবে করা হয়েছে।