৯০টি দেশের পাঁচ শতাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্মার্টকার্ডে বাংলাদেশে তৈরি সফটওয়্যার

ডেস্ক রিপোর্ট: একটি চিপযুক্ত (মোবাইল সিমের মতো দেখতে) স্মার্টকার্ডের অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে দেশে। আর তা ব্যবহার হচ্ছে দেশের একাধিক ব্যাংক ও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিশ্বের ৯০টি দেশের পাঁচ শতাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্মার্টকার্ডে (ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড)। কোনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেডের তৈরি সুরক্ষিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ইএমভি প্ল্যাটফর্মের এই কার্ড বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

জানা যায়, কোনার তৈরি স্মার্টকার্ড ই্এমভি প্ল্যাটফর্ম চিপ বা সিম যুক্ত। এই প্ল্যাটফর্মটি অনেক বেশি নিরাপদ। বিশ্বের বিখ্যাত অনেক ব্যাংক এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। দেশের ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউসিবিসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক ইএমভি কার্ড ব্যবহার করছে। ব্যাংকগুলো এই সেবা ও প্রযুক্তিকে নিরাপদ ভাবতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,অস্ট্রেলিয়া,মেক্সিকো,ব্রাজিল,ভারত,ইন্দোনেশিয়া,ইরাকসহ ৯০টি দেশের ৫০০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেডের তৈরি অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। এরমধ্যে রয়েছে সিটি ব্যাংক এনএ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এমিরেটস এনবিডি, ন্যাশনাল ব্যাংক অব মিসর, বার্কলেস ব্যাংক, ব্যাংক অব মস্কো, ন্যাশনাল ব্যাংক অব আবুধাবি, আরব ব্যাংক, হানা ব্যাংক, সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি।

আমাদের দেশের অনেক ব্যাংকের এটিএম কার্ডে (ডেবিট ও ক্রেডিট) রয়েছে ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ। এই কার্ড খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর অথেনটিকেশন হলো পিন নম্বর। এটিএম কার্ড বুথের স্লটে ঢোকালে তা সার্ভার থেকে অথেনটিকেশন হয়ে আসে। এই কার্ডের সব তথ্য কার্ডের পেছনে ম্যাগ স্ট্রাইপে এনকোডিং অবস্থায় থাকে। এর অসুবিধা হলো কারও কার্ড যদি অন্য কারও হাতে পড়ে তাহলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। আর যদি স্কিমিং মেশিন থাকে তাহলে সব তথ্য মেশিনে চলে আসবে। পাসওয়ার্ড নিতে হলে প্রয়োজন হয় ইনফ্রারেড ক্যামেরা। সংশ্লিষ্ট বুথগুলোতে পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেওয়ার জন্য হয় ক্যামেরা বসানো থাকে নয়তো অপটিক্যাল কি-প্যাড বসিয়ে তথ্য চুরি করা হয়। কি-প্যাডের ওপর অপটিক্যাল লেয়ার বসিয়েও পাসওয়ার্ড ‍চুরি করতে পারে অপরাধীরা। এই পদ্ধতিতে এটিএম বুথের পিন প্যাডের ওপরে পাতলা অপটিক্যাল লেয়ার (কি-বোর্ড) বসানো হয়। যা বোঝা যায় না।

প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইএমভি কার্ডে এসব সমস্যা নেই। এই কার্ডে যে চিপটি থাকে তাতে সব তথ্য সুরক্ষিত থাকে। ক্রিপটোগ্রাফিক অ্যালগোরিদম এখানে প্রসেস হয়। ফলে এখান থেকে তথ্য (ডাটা) বের করা সম্ভব নয়। তবে কেউ যদি এটা বের করেও ফেলে তাহলে বেহাত হওয়া ডাটা তারা ব্যবহার করতে পারবে না। ওই ডাটা এলোমেলো অবস্থায় থাকে। যা উদ্ধার করতে প্রয়োজন হয় ক্রিপ্টো পাসওয়ার্ড। এই ক্রিপ্টো পাসওয়ার্ড ব্যাংকে পৃথকভাবে সুরক্ষিত থাকে। ক্রিপ্টো পাসওয়ার্ড পাওয়া না যাওয়ায় কার্ডের ডাটা ব্যবহার উদ্ধার করা সম্ভব নয় অপরাধীদের পক্ষে। তাই দিন দিন ইএমভি কার্ডের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এখনও কোথাও কোনও ইএমভি কার্ড অপব্যবহার হওয়ার খবর শোনা যায়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় অপরাধীরা বুথে স্কিমিং যন্ত্র বসিয়েও চিপভিত্তিক কার্ড থেকে তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে না বলে জানা গেছে। দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থানির্ভর হওয়ায় চিপভিত্তিক কার্ডে নিরাপত্তা বেশি। চিপভিত্তিক কার্ডে ইএমভি (ইউরো-পে,মাস্টার কার্ড ও ভিসা) প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করায় তা অধিক সুরক্ষিত ও নিরাপদ। এই প্ল্যাটফর্মটি প্রথমে তিনটি প্রতিষ্ঠান মিলে শুরু করায় তিন প্রতিষ্ঠানের নামের আধ্যাক্ষর দিয়ে গঠন করা হয়। পরে এই কনসোর্টিয়ামে আরও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান যুক্ত হলেও নাম আর পরিবর্তন হয়নি।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনাওয়ার হোসেন তানজিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইএমভি সফটওয়্যারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশের কাজ আমাদের দেশেই হচ্ছে। এই চিপ বিশ্বের ৯০টি দেশের ৫০০ এর বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে। তিনি আরও বলেন, যারা এই গবেষণায় ও ডেভেলপমেন্টে জড়িত তারা সবাই এ দেশের মেধাবী তরুণ প্রোগ্রামার, প্রকৌশলী। ফলে আমাদের সক্ষমতার কথাও বিদেশে প্রচার হচ্ছে, দেশের ইমেজ বাড়ছে। তিনি উল্লেখ করেন এতোগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্ড ব্যবহার করায় তা মানুষের হাতে হাতে ফিরছে। এটা দেশের একটা বড় অর্জনও।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি কার্ডের সুরক্ষিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি স্মার্ট কার্ডের পেমেন্ট সলিউশন প্রোভাইডারও। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ইনোভেটিভ কোনা কিউআর ও এনএফসি পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে যা দেশ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে মোবাইল দিয়েই ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রি-পেইডসহ সব ধরনের কার্ডে পেমেন্ট দেওয়া সম্ভব।