অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে বাংলাদেশের রেলরুট

অপটিক্যাল ফাইবার বাংলাদেশের রেলপথ অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত রেলওয়ের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এতে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখার মাধ্যমে জনসাধারণের রেল পরিসেবাও বাড়বে। এছাড়া বাড়বে রেলওয়ের অপারেশনাল ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের গতিশীলতা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫৭৫ কিলোমিটার সেকেন্ডারি লাইনে অপটিক্যাল ফাইবারভিত্তিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন এবং চালুকরণ’ নামক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এই টাকার পুরোটাই জোগান দেওয়া হবে। এটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি ২০২০ সালের ৩০ জুন মেয়াদকালে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য ১৯৯২ সালে নরওয়ে সরকারের অনুদানে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অপটিক্যাল ফাইবার ভিত্তিক একটি সমন্বিত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। এই নেটওয়ার্কে ১৬০০ কিলোমিটার কম্পোজিট ক্যাবল (অপটিক্যাল ফাইবার+ কপার ক্যাবল) ও ২০০ কিলোমিটার শুধু কপার ক্যাবল স্থাপন করা হয়। রেলওয়ের ব্যবহারের অতিরিক্ত অপটিক্যাল ফাইবারের সুপ্তধারণ ক্ষমতা ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গ্রামীণফোন লিমিটেডকে লিজ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও গ্রামীণফোন আরও ৪০৯ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করে, যা বর্তমানে গ্রামীণফোন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে আসছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ে আরও ৪০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করেছে, যা থেকে রেলওয়ের ব্যবহারের অতিরিক্ত অপটিক্যাল ফাইবার কোর টিটিআরসি কর্তৃক এনটিটিএন লাইসেন্স প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য এনটিটিএন, টেলিকম অপারেটর, আইএসপি অপারেটরের মধ্যে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে লিজ প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও রেলওয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে প্রায় ৫৬৯ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নতুনভাবে স্থাপন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের অধিকাংশ প্রধান রেলরুটে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হলেও ৫৭৫ কিলোমিটার সেকেন্ডারি লাইনে এখন পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা যায়নি। বর্তমানে উক্ত রেলরুটে কপার ক্যাবল দ্বারা রেলওয়ের টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম চালু আছে। কপার ক্যাবল ভিত্তিক টেলিযোগাযোগ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকায় কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। ৫৭৫ কিলোমিটার সেকেন্ডারি লাইনের আওতায় রয়েছে পৌডিরপুর থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত ৫২.১১ কিলোমিটার, শ্যামগঞ্জ থেকে ঝারিয়াঝাঞ্জাইল পর্যন্ত ২১.১৬ কিলোমিটার, তারাকান্দি হতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পর্যন্ত ৩৭.৫৯ কিলোমিটার, লাকসাম থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত ৪৯.৯ কিলোমিটার, ফতেয়াবাদ হতে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত ২.০৯ কিলোমিটার, দিনাজপুর হতে পঞ্চগড় পর্যন্ত ১০১.৫৯ কিলোমিটার, কাঞ্চন হতে বিরল পর্যন্ত ৬.১ কিলোমিটার, সৈয়দপুর হতে চিলাহাটি পর্যন্ত ৫২.২০ কিলোমিটার, লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারি পর্যন্ত ৮৪.৩৩ কিলোমিটার, তিস্তা জংশন হতে রমনা বাজার পর্যন্ত ৪৭.৫৭ কিলোমিটার, পাচুরিয়া থেকে গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত ১১.৪৭ কিলোমিটার, যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ৩৫.২ কিলোমিটার, রাজশাহী থেকে চাপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৫০.২ কিলোমিটার এবং আমনুরা হতে রহনপুর পর্যন্ত ২৫.১৬ কিলোমিটার।

সূত্র আরও জানায়, উক্ত সেকেন্ডারি লাইনে বিদ্যমান কপার ক্যাবলভিত্তিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে রেলওয়ের অন্যান্য সেকশনের অনুরূপ অপটিক্যাল ফাইবার ভিত্তিক টেলিযোগাযোগ পদ্ধতি চালু করার লক্ষ্যে বিবেচ্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বাণিজ্যিক সুবিধাদি বৃদ্ধির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে।

এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে ৭৮.১৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে তা ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য বিবেচ্য প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটির ওপর ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মোট ৬৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের সেকেন্ডারি লাইনে অপটিক্যাল ফাইবারভিত্তিক টেলিযোগাযোগ মালামাল সংগ্রহ, স্থাপন ও চালুকরণ; মোটরযান সংগ্রহ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রেলওয়ের ফাইবার নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটবে। এতে রেলওয়ের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখার মাধ্যমে জনসাধারণের রেল পরিসেবা এবং রেলওয়ের অপারেশনাল ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের গতিশীলতা বাড়বে।’