সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা তছরুপ করেছে গ্রামীণফোন

রাষ্ট্রের সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা তছরুপ করেছে দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) অডিটে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তবে গ্রামীণফোনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশাল অঙ্কের অর্থ তছরুপের তথ্য সঠিক নয়। কারণ অডিটে অনেক ডাবল বিলিং আছে। এ ব্যাপারে বিটিআরসির কাছ থেকে কোনো চিঠিও তারা অফিসিয়ালি পাননি।

বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭ পর্যন্ত সময়ে অপারেটরের ইনফর্মেশন সিস্টেম অডিটে রাষ্ট্রের এ পাওনার বিষয়টি উঠে আসে।

এর আগে ২০১১ সালে প্রথম অডিটে অপারেটরটি ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা দেনা হলে তারা সেটি নিয়ে আদালতে যায়। সে সময় অপারেটরটি অভিযোগ করে অডিট রিপোর্টটি আন্তর্জাতিক মানের হয়নি।

গ্রামীণফোনের অভিযোগের ভিত্তিতেই দ্বিতীয়বারের অডিট উদ্যোগে বিটিআরসি অডিট ফার্ম নিয়োগে বিদেশি পার্টনার ফার্ম গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে। সে হিসেবে তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি লিড অডিটর এবং তার সহযোগী অডিটর ছিল ইন্ডিয়ার সিএনকে অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস, এলএলপি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট।

অডিট রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী গ্রামীণফোনের কাছে সরকারের পাওনা ১১ হাজার ৫৩০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কমিশন সভার বিবরণী অনুসারে- অডিট ফার্ম তোহা খান জামানের দাখিল করা অডিট প্রতিবেদন অনুসারে মোট অর্থের মধ্যে বিটিআরসির পাওনা ৭ হাজার ৪৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা।

বাকি ৪ হাজার ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) ও ট্যাক্স বাবদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা।

অডিট রিপোর্টটি কমিশন গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে কমিশন সভার বিরণীতে বলা হয়, বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের ভ্যাটিং নিয়ে আদায়যোগ্য অর্থ উশুল করার জন্য গ্রামীণফোনের কাছে দাবিসংবলিত চিঠি পাঠানো হবে।

একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা সম্পর্কে অবহিত করে তা আদায়ের জন্য এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হবে।

কমিশন সেক্রেটারি মো. জহিরুল ইসলাম কশিমনের ২১৫তম সভার কার্যবিবরণীতে ২৩ জুলাই সই করেন। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং অবহিতকরণের লক্ষ্যে এ বিবরণী বিটিআরসির সব কমিশনার এবং সব মহাপরিচালকের দফতরে পাঠানো হয়।

তবে অডিট রিপোর্ট নিয়ে কমিশনের কেউ নাম উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিটিআরসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, গ্রামীণফোনের দাবি অনুযায়ী আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞ অডিট ফার্মকে সহযোগী করে অডিট সম্পন্ন করা হয়েছে। তাদের অডিট আপত্তির বিষয়ে মতামত নেয়া হয়েছে। চার দফা সংশোধন করে রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিশাল অঙ্কের এই ফাঁকি যে আমরা ধরতে পেরেছি এটা রেগুলেটরি হিস্ট্রিতে মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ টাকা আদায় করা সম্ভব হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাবিনামা জারির পর বিষয়টি বুঝতে পারবেন।

টেলিকম রেগুলেটর বিটিআরসি ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর গ্রামীণফোনের ইনফর্মেশন সিস্টেম অডিটের জন্য অডিট ফার্ম তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি ও তাদের বিদেশি সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিএনকে অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস, এলএলপি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট ইন্ডিয়াকে নিয়োগ প্রদান করে।

২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর অডিট কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমদিকে অপারেটরটির অসহযোগিতার কারণে অডিট শুরুটা বিলম্বিত হয়। বিটিআরসির নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি বিটিআরসিকে পত্র মারফত জানায়, তারা ১৯ জুলাই ২০১৬ থেকে গ্রামীণফোনে সরেজমিন অডিট শুরু করে।

৩ মে ২০১৮ তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। ১৯ জুলাই ২০১৮ কমিশন সভায় অডিট রিপোর্টটি উত্থাপন করা হয়।