চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ছে

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমান ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩২ বছর বয়স করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তারা সর্বসল্ফত ভাবে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তবনা তৈরি করেছেন। অনুমোদনের সুপারিশ করে শিগগির প্রস্তাবটি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দফতরে পাঠানো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক অনুমোদনের পর প্রস্তাবটির চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মমিন্ত্রসভায় উপস্থাপন করা হবে। এর আগে পর্যন্ত সাধারন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর বহাল থাকবে। এ পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ক্ষেত্রেও বয়স বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই সরকারের।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানায়, গত ২০ আগস্ট মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছিলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বাড়তে পারে। তবে বিষয়টি এখনও চুড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়টি সরকার ইতিবাচক চিন্তা করছে। তবে অবসরের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। এরই অংশ হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করার চিন্তা-ভাবনা করেন সরকারের নীতি নির্ধারকরা। মাস দু’য়েক আগে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সংসদীয় কমিটি। এরই অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে তা ৩২ বছর। দেশে বেকারত্বের পরিমাণ বৃদ্ধি উচ্চশিক্ষার হার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট ইত্যাদি কারণে দীর্ঘদিন ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন চাকরি প্রত্যাশীরা।

চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা সর্বোচ্চ বয়স ৩২ বছর নির্ধালন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে থেকে পাঠানো হবে। তবে এ প্রস্তাবনা যে বহাল থাকবে সেটিও চূড়ান্ত নাও থাকতে পারে। এরপরও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় ইচ্ছা করলে বয়সসীমা আরো বাড়াতে পারে। মন্ত্রণালয় বর্তমান প্রেক্ষাপটে পারস্পারিক আলোচনার ভিত্তিতে ৩২ বছর করার প্রস্তাব করেছে।

বিগত এরশাদ সরকারের আমল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। পরবর্তীতে বিএনপির চেযারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সরকার ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়। এরপর চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা না বাড়ানো হলেও ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সরকারি চাকরিতে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৫৭ থেকে দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়। পাশাপাশি বীরমুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করা হয়। অবসরের বয়স বৃদ্ধির কারণে সরকারি চাকরিতে শুন্য পদের সংখ্যা কমে যায়। এরপর থেকেই চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। মানববল্পব্দন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করে আসছেন তারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এই দাবিকে যৌক্তিক মনে করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। জুনে অনুষ্ঠিত সভায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার সুপারিশ করা হয়। এ সুপারিশের প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পর্যালোচনা শেষে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে। সরকার প্রধানের অনুমোদন পেলে সার-সংক্ষেপ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। সূত্র: ইনকিলাব