১০ বছরে ১৮ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ

>> দুই মেয়াদে মোট ব্যয় অনুমোদন ১৭,৮২,৯০৪ কোটি টাকা
>> অবকাঠামো খাতে অর্থ বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি
>> প্রথম মেয়াদে মোট ব্যয় ৪,৪৯,৮৩০ কোটি টাকা
>> ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ৩,৮৪,৫২৮ কোটি টাকা
>> ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৩১৮টি প্রকল্প অনুমোদন
>> উন্নয়নের ছোঁয়া সর্বত্র : পরিকল্পনামন্ত্রী

বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে নেয়া হয়েছে মোট দুই হাজার ১৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পে প্রায় ১৮ লাখ কোটি (১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ কোটি) টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। এ অর্থের বড় একটি অংশ বরাদ্দ হয়েছে রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে। এছাড়া কৃষি, আর্থ-সামাজিক ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে দেয়া হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক প্রকল্প।

গত ১০ বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপর তৈরি করা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলছেন, দেশের এমন কোনো জায়গা পাওয়া যাবে না যেখানে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এই সরকার উন্নয়নমুখী। ধারাবাহিকতা বাজায় থাকার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মনোযোগ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, এ সময়ে সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এখন সময় এসেছে টেকসই উন্নয়নের প্রতি নজর দেয়ার। আগামীতে ক্ষমতায় আসলে অবশ্যই এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। কেননা এতোদিন আমাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল, এখন সেটা অর্জিত হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, উন্নয়নের জন্য এই সরকার টানা ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত সময় পায়। এই ১০ বছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ কোটি টাকার। মোট দুই হাজার ১৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকূলে এ অর্থ অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে গত তিন অর্থবছরেই অনুমোদন হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ২২ হাজার ৯০৬ কোটি টাকার প্রকল্প, যা গত ১০ বছরে অনুমোদিত ব্যয়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ।

দেশে বড় বাজেটের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৮-০৯ অর্থবছরের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় অর্থবছরটির প্রথম একনেক সভা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষ একনেক সভা হয় গত অর্থবছরের ২৬ জুন। এসব সভায় প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকাজও এগিয়ে চলছে। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যাতে নির্বিঘ্নে হয়, সেজন্য যুক্ত করা হয়েছে ফার্স্ট ট্র্যাক। প্রতি মাসে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি খতিয়ে দেখছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুসহ বেশির ভাগ প্রকল্পের সন্তোষজনক অগ্রগতির চিত্র উঠে এসেছে। ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প।

এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের অবকাঠামোগত চিত্র অনেকটাই বদলে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য অনুসারে, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের পরিমাণ চার লাখ ৪৯ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মেয়াদে ১ হাজার ১৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে অনুমোদন হয়েছে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাঁচ লাখ ১৩ হাজার কোটি এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যদিও ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মোট ৪৩ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল মাত্র ১০ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দাবি, বড় ধরনের পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুরুতে কিছুটা সক্ষমতার অভাব থাকলেও এখন যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে শতভাগ সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি টেকসই গতিশীলতার মধ্যে এসেছে। সেই গতিশীলতা ধরে রাখতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে সবসময়ই পিছিয়ে পড়া এলাকা, প্রান্তিক মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি সকল জনগোষ্ঠীর উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী কামাল জানান, দারিদ্র্য বিমোচন ও আয়বৈষম্য কমিয়ে আনার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই প্রকল্প গ্রহণের অন্যতম লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদে অর্জিত অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন হয়েছে। এতে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) পরবর্তীতে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো (এসডিজি) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার নীতি-কৌশল ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহণ করা হচ্ছে সেভাবেই।

১০ বছরের প্রকল্প ও ব্যয় অনুমোদন

অর্থবছর প্রকল্প ব্যয় অনুমোদন
২০০৮-০৯ ৬৯টি ১৩,৭৮৩ কোটি টাকা
২০০৯-১০ ২২৫টি ৮০,৪৬৯ কোটি টাকা
২০১০-১১ ২৫০টি ১১২,১২৬ কোটি টাকা
২০১১-১২ ১৬৮টি ১৬১,২৬০ কোটি টাকা
২০১২-১৩ ১৫১টি ১৬,৪০৬ কোটি টাকা
২০১৩-১৪ ২১২টি ১২১,৯৬২ কোটি টাকা
২০১৪-১৫ ২১২টি ১৬৩,৯৯২ কোটি টাকা
২০১৫-১৬ ২৭৮টি ২৭১,৯৪৯ কোটি টাকা
২০১৬-১৭ ২৫২টি ৩,৮৪,৫২৮ কোটি টাকা
২০১৭-১৮ ৩১৮টি ৩,৬৬,৪২৯ কোটি টাকা

১০ অর্থবছরে মোট প্রকল্প ২১৩৫টি মোট ব্যয় অনুমোদন ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৮-০৯ অর্থবছরের (২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি শুরু) ৬৯ প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন করে ১৩ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২২৫টি প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন হয় ৮০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছরই প্রথমবারের মতো প্রকল্প ব্যয় অনুমোদন এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১০-১১ অর্থবছরে ২৫০ প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন হয় এক লাখ ১২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা।

২০১১-১২ অর্থবছর ১৬৮ প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন হয় এক লাখ ৬১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫১ প্রকল্পে ব্যয় অনুমোদন হয় এক লাখ ছয় হাজার ৪০৬ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ২১২ প্রকল্পে এক লাখ ২১ হাজার ৯৬২ কোটি এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২১২ প্রকল্পে এক লাখ ৬৩ হাজার ৯৯২ কোটি টাকার অনুমোদন দেয়া হয়।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো প্রকল্প ব্যয় দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ অর্থবছর ২৭৮ প্রকল্পের বিপরীতে ব্যয় অনুমোদন হয় দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর ২৫২ প্রকল্পের বিপরীতে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা এবং সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৩১৮ প্রকল্পের বিপরীতে তিন লাখ ৬৬ হাজার ৪২৯ কোটি টাকার ব্যয় অনুমোদন দেয় একনেক।