পাকিস্তানকে হারিয়ে সেমির পথে বাংলাদেশ

আগের ম্যাচের নায়ক তপু বর্মণ আবারও আবির্ভূত হলেন ত্রাতা হিসেবে। এই ডিফেন্ডারের হেডেই এলো দুর্দান্ত এক জয়। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানকে ১-০ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিরতির পর বদলে গেল বাংলাদেশ। বদলে গেল ম্যাচের চিত্রও। একের পর এক আক্রমণে পাকিস্তানের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখার পুরস্কারও পেয়ে গেল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যখন তপু বর্মণের হেড জড়িয়ে যায় পাকিস্তানের জালে। ওই গোলটাই বাংলাদেশকে এনে দেয় পুরো ৩ পয়েন্ট। যাতে টানা দ্বিতীয় জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে স্বাগতিকরা।

ভুটানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানের জয়ে প্রথম গোলটি এসেছিল তপুর পা থেকে। ওই ম্যাচে পেনাল্টি থেকে লক্ষ্যভেদ করা এই ডিফেন্ডার পাকিস্তান ম্যাচে ছাড়িয়ে গেলেন আগের অর্জনকে। বিশ্বনাথ ঘোষের লম্বা থ্রো বাংলাদেশের এক খেলোয়াড়ের হেড হয়ে উড়ে যাচ্ছিল পোস্টের দিকে, কোনাকুনি জায়গা থেকে বলটি মাথা ছুঁয়ে জালে জড়িয়ে দেন তপু।

গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গোল করে খুশিতে আত্মহারা তিনি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দর্শকদের বাধভাঙা উল্লাসের সঙ্গে জার্সি খুলে তপুর বুনো উদযাপনে ফুটে ওঠে বাংলাদেশের ফুটবলের এগিয়ে যাওয়ার ছবি। যে ছবি সঙ্গী করে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নের বিভোর এখন বাংলাদেশ।

যদিও অগোছালো ও অপরিকল্পিত ফুটবলই দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের প্রথমার্ধে। দুই দলের কেউই নিশ্চিত কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া ম্যাচে। তাই গোলশূন্যভাগেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি যে সহজ হবে না, সেটা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। তাই রক্ষণের দিকেই হয়তো বেশি মনোযোগ দিয়েছেন তিনি। কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবলে প্রতিপক্ষের রক্ষণে বারকয়েক আক্রমণ চালালেও তাতে পরিকল্পনা ছিল না একেবারেই। তাই সুযোগ তৈরিতে পাকিস্তানই ছিল এগিয়ে।

২৯ মিনিটে ভালো সুযোগ তৈরি হয় পাকিস্তানের। যদিও তাতে বাংলাদেশের রক্ষণের অবদানই বেশি! স্বাগতিকদের রক্ষণের ভুলে বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন পাকিস্তান ফরোয়ার্ড মুহাম্মদ আদিল। লম্বা থ্রো থেকে হেড করেছিলেন পাকিস্তানের এক খেলোয়াড়, তার হেড বাতাসে ভাসতে ভাসতে চলে আসে বাংলাদেশের রক্ষণে। ডিফেন্ডার তপু বর্মণ লাফিয়ে হেড করার চেষ্টা করলেও পারেননি, বল চলে যায় বক্সের মধ্যে। ক্ষীপ্রগতিতে আদিল বক্সের ভেতর বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের গোলরক্ষক শহীদুল আলম বিপদ হতে দেননি।

৩৩তম মিনিটে বাংলাদেশ তৈরি করেছিল গোলের সম্ভাবনা। বাঁ প্রান্ত দিয়ে জামাল ভূঁইয়া পায়ের দারুণ কাজে বোকা বানান প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে, এরপর বাঁ পায়ে ক্রস করে বক্সের ভেতর। যদিও সেটি বিপদমুক্ত করেন পাকিস্তান ডিফেন্ডার আবসুলা নাসির কাজী।

এরপর আরও কয়েকবার বাংলাদেশ আক্রমণে উঠলেও অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে আটকে পড়েছে। বিপরীতে পাকিস্তান বাধা পড়েছে স্বাগতিকদের রক্ষণ কিংবা গোলরক্ষকের সামনে।

প্রথমার্ধের রক্ষণাত্মক ফুটবল থেকে বেরিয়ে বিরতির পর আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। যদিও ৫৫ মিনিটে পাকিস্তান পায় গোটা ম্যাচের সবচেয়ে ভালো সুযোগটি। আরেকবার ভুল করে বসে বাংলাদেশের রক্ষণ, অবশ্য গোলরক্ষক শহীদুল আলমের দুর্দান্ত সেভে রক্ষা পায় স্বাগতিকরা। নিজেদের অর্ধ থেকে পাকিস্তানের এক খেলোয়াড় লম্বা করে বল পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশের ডি বক্সের দিকে। বলটা সহজেই নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারতেন টুটুল হোসেন বাদশা। কিন্তু পেছন থেকে মোহাম্মদ আলি তার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ফাঁকা রক্ষণে আড়াআড়ি জোরালো শট করেছিলেন পোস্টের মধ্যে। প্রস্তুত থাকা শহীদুল অসাধারণ দক্ষতায় প্রতিহত করেন শটটি।

মিনিট তিনেক পর দর্শকদের গর্জনে কেঁপে ওঠে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারি। বিপলু আহমেদের দূরপাল্লার শট পোস্টের মধ্যেই ছিল, যদিও পাকিস্তান গোলরক্ষক ইউসুফ বাট সহজেই লুফে নেন বল। ৬৯ মিনিটে আরেকটি সম্ভাবনা তৈরি হয় বাংলাদেশের। কিন্তু এবারও হতাশ হতে হয়। বাঁ প্রান্ত থেকে ওয়ালি ফয়সালের বাড়ানো ক্রস অনেকটা লাফিয়ে হেড করেছিলেন মাশুক মিয়া জনি। প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার তাকে আঘাত করলে হেডটি রাখতে পারেননি পোস্টে। জনি মাটিতে পড়ে গেলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে গ্যালারিতে ওঠে পেনাল্টির আওয়াজ। যদিও রেফারি তাতে সাড়া দেননি।

এরপর আরও কয়েকবার পাকিস্তানের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় স্বাগতিকরা। তার পুরস্কারও পেয়ে যায় ৮৫ মিনিটে, যখন তপুর হেডে আসে ম্যাচের একমাত্র গোলটি। যে গোলে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো লাল-সবুজের দল।