বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হওয়ায় ভারতে অনুপ্রবেশ কমেছে

নিজ দেশে এখন ভালো জীবন যাপন করতে পারায় বেশি সংখ্যক মানুষের ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ বা অভিবাসন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাফিনুল ইসলাম। শুক্রবার বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান জানান অল্প যে কয়েকজন বাংলাদেশি ভারতে অনুপ্রবেশ করছে তার কারণ পুরনো সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক বন্ধন। দিল্লি সফররত বিজিবি মহাপরিচালক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনোমিক টাইমস।

দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দ্বিবার্ষিক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে ভারত সফর করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাফিনুল ইসলাম। ছয়দিনের সফরের শেষ দিনে শুক্রবার ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর মহাপরিচালক কে কে শর্মার সঙ্গে দিল্লিতে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন বিজিবি প্রধান।

ওই সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি প্রধান জানান, দুই দেশের মধ্যকার চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত থেকে গত ছয় মাসে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের সময় মাত্র একশোজন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বড় মাত্রার অনুপ্রবেশ নেই। আপনারা বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জানেন…আমাদের জিডিপি ৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং বাংলাদেশে মানুষ এখন ভালো জীবন যাপন করতে পারছে। সেকারণে সংঘবদ্ধভাবে অনুপ্রবেশ বা বেশি সংখ্যক মানুষের অনুপ্রবেশ খুবই কমে গেছে’।

বিজিবি প্রধান বলেন, ‘যে সমস্ত বাংলাদেশি নাগরিক সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে তাদের কারণ সাংস্কৃতিক বন্ধন ও সীমান্ত পেরিয়ে থাকা ঐতিহাসিক সম্পর্ক। অনেকেরই আত্মীয়-স্বজন সীমান্তের এপারে রয়ে গেছে ও এখনও বসবাস করছে আর সেই সূত্রেই তারা বেড়াতে আসছে। বেশিরভাগ অবৈধ অনুপ্রবেশ এই কারণে ঘটছে। তারা সীমান্তের এপারে থাকা বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করে আবারও বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছে। আমরা যাদের আটক করেছি তাদের বেশির ভাগেরই একই ঘটনা’।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক কে কে শর্মা জানান, চলতি বছর এখন পর্যন্ত তারা ১ হাজার ৫২২ জন বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীকে আটক করে স্থানীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। তিনি জানান, এদের কেউ কেউ মানবপাচারের শিকার হয়েছে আর ১৬৬ জন অসাবধানতাবসত সীমান্ত অতিক্রম করেছে। কে কে শর্মা বলেন, আমরা আমাদের বাহিনীর সদস্যদের মানব পাচারের শিকার ও এই অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের আলাদা করতে পারার সক্ষমতা অর্জন করতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

দ্বিবার্ষিক আলোচনা শেষে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে সীমান্তে গবাদি পশু পাচারের ঘটনা কমে গেছে। তারা বলেন, গবাদি পশু পাচারের ঘটনা কমেছে। এর অনেক কারণ রয়েছে, একটা হতে পারে আমরা আরও তৎপর রয়েছি। আরও একটি হতে পারে অন্য পাশে (বাংলাদেশে) এর চাহিদা কমেছে কারণ তারা গবাদি পশু পালন ও প্রজননকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবে গ্রহণ করেছে। পশু পালন করতে চাওয়া ব্যক্তিদের প্রচুর ঋণও দেওয়া হচ্ছে।

বিএসএফ মহাপরিচালক কে কে শর্মা বলেন, ‘আমি বলছি না এটা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বহু বছর ধরে স্থানীয় মানুষ এর উপর নির্ভরশীল আর দুই দেশের সীমান্তে অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক নদী ও খাল রয়েছে। এসমস্ত জায়গা দিয়ে পশু ঠেলে দিয়ে অপর পাশ দিয়ে তা গ্রহণ করা বেশ সহজ’। সে কারণে কখনও কখনও পশু পাচার অপরাধ দমন খুবই কঠিন বলে জানান তিনি।

সফররত বিজিবি প্রধান শর্মার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে নিহত বাংলাদেশিদের অনেকেই পশু পাচারের সঙ্গে জড়িত। মেজর জেনারেল শাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশ অনেক বেশি উদ্বিগ্ন আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব ঘটে যারা পশু পাচারে সহায়তা করতে যায়। এটা বুঝতে পেরে এই বিষয়ে দুই বাহিনী যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে… আমরা সীমান্ত হত্যার ঘটনা মাত্র একটিতে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি’। তবে এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই এই বছর সীমান্তে একটিও বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা ঘটেনি’।

শাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এটাকে শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সম্মত হয়েছি। সীমান্তে আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি যাতে এটা (পশু পাচার) না হতে পারে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি গবাদি পশুর ক্ষেত্রে আমরা প্রায় আত্ম-নির্ভরশীল হয়ে উঠেছি। আমরাও চাই সীমান্তে এটা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হোক আর হৃদয়ে সেই উদ্দেশ্য ধারণ করে আমরা বিএসএফ-এর সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কাজ করছি’।

দুই বাহিনী উভয় দেশের সীমান্তে আরও পাঁচটি ‘অপরাধমুক্ত অঞ্চল’ চালুর সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কথা জানানো হয় ওই সংবাদ সম্মেলনে। পশ্চিম বঙ্গের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এই বছরের মার্চে প্রথমবারের মতো একটি ‘অপরাধমুক্ত অঞ্চল’ চালু করা হয়। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় বিজিবি-বিএসএফ যৌথ তৎপরতার মাধ্যমে ‘অপরাধমুক্ত অঞ্চল’কে সব ধরণের অবৈধ, অসামাজিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা হয় বলে ব্যাখা করেন বিসএফ-এর এক কর্মকর্তা।