দেশের পুঁজিবাজারে চলতি বছরের আট মাসে ১৫ কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন পেয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে বেশি। অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ৭৭৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ১১ কোম্পানির শেয়ারবাজারে লেনদেন হচ্ছে। অবশিষ্ট ৪টি শেয়ার লেনদেনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে পুঁজিবাজারে ৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। সেই হিসাবে এ বছর পুঁজিবাজারে ৬০ শতাংশ আইপিও বেশি তালিকাভুক্ত হয়েছে। পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহকারী কোম্পানিগুলো হচ্ছে- কুইন সাউথ টেক্সটাইল, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, ইন্টাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, এস কে ট্রিমস, বসুন্ধরা পেপার, আমান কটন, ভিএফএস থ্রেড। এসব কোম্পানির বাজারে লেনদেন চলছে।
এছাড়া এমএল ডাইং, সিলভা ফার্মা ও ইন্দো ফার্মা লেনদেনের প্রক্রিয়ায় আছে। আর কাট্রালি টেক্সটাইল আইপিও আবেদন শেষ হয়েছে এবং এসএস স্টিল আইপিও অনুমোদন পেয়েছে। কোম্পানিটির চাঁদা গ্রহণের তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি।
এদিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে বাজারে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে এস্কয়ার নিট ও রানার অটোমোবাইল লিমিটেড। কোম্পানি ২টির বিডিং প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে। এস্কয়ার নিটের কাট অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ টাকা। কোম্পানিটি বাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
অন্যদিকে রানার অটোমোবাইলসের কাট অফ প্রাইস নির্ধারণ হয়েছে ৭৫ টাকায়। গত ১০ থেকে ১৩ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা ৭২ ঘণ্টার বিডিংয়ে (নিলাম) অংশগ্রহণ করে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা এ মূল্য নির্ধারণ করেছেন। আর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৬৮ টাকা। গবেষণা ও উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ মেটাতে চলতি বছরের ১০ই জুলাই রানার অটোমোবাইলসকে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনের জন্য রাখা হয় ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার।
কাট-অফ প্রাইস ৭৫ টাকা নির্ধারিত হওয়ায় এর থেকে ১০ শতাংশ কমে আইপিও’র মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হবে। এ হিসাবে আইপিওতে প্রতিটি শেয়ারের দাম হয় ৬৭ টাকা। আইপিও’র মাধ্যমে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ছাড়বে রানার অটোমোবাইলস।
আইপিও পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ারবাজারে ছেড়েছে।
অ্যাডভেন্ট ফার্মা লিমিটেড ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। কোম্পানিটিকে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ২ কোটি শেয়ার ইস্যু করেছে।
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৩ কোটি শেয়ার ইস্যু করেছে কোম্পানিটি।
এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৩ কোটি শেয়ার ইস্যু করেছে।
ভিএফএস থ্রেড ডাইং লিমিটেড ২২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ২ কোটি ২০ লাখ শেয়ার ইস্যু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে উপরোক্ত ৫ কোম্পানির মধ্যে সর্বনিম্ন শেয়ার ছেড়েছে কুইনসাউথ টেক্সটাইল এবং সর্বোচ্চ শেয়ার ছেড়েছে ইন্ট্রাকো সিএনজি ও এসকে ট্রিমস টেক্সটাইল। কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে লেনদেন চলছে।
অন্যদিকে এমএল ডাইং ২ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা, সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৩০ কোটি টাকা, ইন্দো-বাংলা ফার্মা ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি এবং কাট্টালি টেক্সটাইল ৩ কোটি ৪০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ৩৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে কাট্টালি টেক্সটাইল ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেনের অপেক্ষায় রয়েছে। কাট্টালি টেক্সটাইলের আইপিও আবেদন ১৩ই সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে। এখন লটারির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এছাড়া এসএস স্টিল আইপিওর মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েছে। ১০ টাকা ফেস ভ্যালুতে ২ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করবে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানির চাঁদা গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হয়নি।
এদিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি অনুসরণ করে বসুন্ধরা পেপার পুঁজিবাজারে ২ কোটি ৬০ লাখ ৪১ হাজার ৬৬৭টি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১৯৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫২ টাকা সংগ্রহ করেছে। কোম্পানির শেয়ার বাজারে লেনদেন হচ্ছে। আর আমান কটন মিলস পুঁজিবাজার থেকে ৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত অর্থের একটি বড় অংশ দিয়ে কারখানায় আধুনিক মেশিনারি স্থাপন করবে প্রতিষ্ঠানটি।