ইভিএম হ্যাকিং নিয়ে ইসির ব্যাখ্যা

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে এখন রাজনৈতিক মাঠ সরগরম। বিএনপি জোট এর ঘোর বিরোধী। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় সংসদে ইভিএম ব্যবহারের বিধান যুক্ত করে সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

কিন্তু আরপিও সংশোধন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। যা আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পাস হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

যদিও আরপিও সংশোধন হলেও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি হবে না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন।

আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কিনা বা করলেও কী পরিমাণ ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে আইন সংস্কার কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম সাংবাদিকদের বলেন, ইভিএম ব্যবহার করতে হলে আরপিও সংশোধন করতে হবে। আরপিও সংশোধন করা হলে দেখতে হবে এর পেছনে যারা কাজ করবে তাদের কী অবস্থা। সবদিক বিবেচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে।

তিনি বলেন, স্থায়ী সরকারের নির্বাচনগুলোতে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। পরবর্তীতে কমিশন চাইলে যাতে ইভিএম ব্যবহার করতে পারে সেজন্যই বিধানটি আরটিওতে যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া নিজেদের সক্ষমতা থাকলে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা পেলেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।

এর আগে ইসি বুয়েট থেকে যেসব ইভিএম সংগ্রহ করেছিল, সেগুলো নষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। আর বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে নেয়া নতুন এ ইভিএম অনলাইন নাকি অফলাইন? হ্যাকিং করা যাবে কি না? ভোটারের তথ্য গোপন থাকবে কি না? ব্যালটে সিল মারার মতো এক ব্যক্তি একাধিক ভোট দিতে পারবে কি না? একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবে কি না? ভোট দেয়ার প্রক্রিয়া কেমন হবে? এরকম না না প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ মানুষদের মধ্যেও।

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে। ইভিএম হ্যাকিংয়ের বিষয়ে ইসির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনুবিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুর হক বলেন, যেহেতু নতুন এই ইভিএম অফলাইনে ব্যবহার করা হবে। ইভিএমে কোনো নেট সংযোগ থাকবে না। তাই এটি হ্যাক করা সম্ভব নয়।

এছাড়া এক বুথের ইভিএমের সঙ্গে অন্য বুথের ইভিএমের কোনো সংযোগ থাকবে না বলেও জানান তিনি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নতুন এই ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া ব্যালটের চেয়েও সহজ হবে। ব্যালটে ভোট দিয়ে সেটি ভাজ করার সময় অনেক বয়স্ক নাগরিক সেটি নষ্ট করে ফেলেন। ইভিএমের দুটি অংশ- একটি অংশ প্রথমে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কাছে থাকবে। যেটি দিয়ে তারা জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ নিয়ে প্রকৃত ভোটার কি না তা সণাক্ত করবেন।

আরেকটি অংশ থাকবে গোপন কক্ষে, যেখানে গিয়ে ভোটাররা ভোট দিবেন। প্রকৃত ভোটার হিসেবে চিহ্নিত হলে গোপন কক্ষের ওই অংশে তার জন্য একটি ব্যালট পেপার প্রস্তুত হবে। সেখানে গিয়ে ভোটার তার পছন্দের প্রতীকে চাপ দিলে সবুজ বাতি জ্বলে উঠবে। তখন সেটিতে চাপ দিলে তার ভোট দেয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে।

ইভিএম হ্যাকিংয়ের বিষয়ে কথা হলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।

ব্যালটে সিল মারার মতো একজন মানুষ ইভিএমেও কি একাধিক ভোট দিতে পারবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। ইন্টারন্যাশনাল যত হ্যাকার আছে নিয়ে আসো। আমরা এটা প্রমাণ করতে চাই যে কেউ এটি হ্যাকিং করতে পারে না। কারণ এটার কোনো নেটওয়ার্ক কানেকশন নাই। ইন্টারনেট না থাকলে সেখানে ঢুকবে কি করে?

ভোটগুলো কিভাবে গণনা করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা কেন্দ্রে সাত থেকে আটটা বুথ থাকে। ভোট শেষে এককেন্দ্রের সবগুলো মেশিন একসাথে কন্ট্রোল ইউনিটে চলে আসতেছে। সেখানে এনে আমাদের ল্যান (লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক) আছে। আমরা কার্ডগুলো পাঞ্চ করবো। তখন কোন প্রতীকে কতটি ভোট পড়েছে বুথ অনুযায়ী প্রিন্ট আসবে এবং কমবাইন্ডলিও প্রিন্ট চলে আসবে।

আমার ভোট আমি কোন প্রতীকে দিলাম এটা চিহ্নিত করার কোনো সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আইন বিরোধী। এটা জানার কোনো সুযোগ নেই।

ইভিএমের মেমোরি চিপ এক বছর সংগ্রহ করা হবে। কারণ আইন অনুযায়ী নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের দুইমাসের মধ্যে মামলা করতে হয়। কেউ মামলা করলে প্রমাণ স্বরুপ চিপটাকে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।

নেট কানেকশন না থাকলে বুথে ভোটারের তথ্য কিভাবে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইসি সচিবালয় থেকে বুথ ভিত্তিক ভোটার তালিকা ঠিক করে দেয়া হবে। এটা আমাদের কার্ডে সংরক্ষণ থাকবে। এই তথ্যগুলো সকাল ৭টায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে। ভোটগ্রহণের সময় এনআইডি নম্বর দিয়ে ও আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোটারকে সণাক্ত করা হবে। একবুথের ভোটার অন্য বুথে কিছুতেই ভোট দিতে পারবে না। কারণ তাকেও অন্য বুথে খুঁজেই পাওয়া যাবে না।

ইভিএমের কার্যকারিতা দেখানোর জন্য আগামী মাসে ঢাকায় মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। দশটি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে মেলা করা হবে। যদি কেউ ইভিএম দেখে তাহলে সে এর বিরোধীতা করবে না। এই ক্লাসের ইভিএম পৃথিবীর কোথাও নেই। সার্চ দিয়ে দেখতে পারো। মাদারবোর্ড থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা অত্যাধুনিক জিনিস এতে ব্যবহার করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস তিন বছর পর বাংলাদেশের ৯৯ভাগ লোক ইভিএমের পক্ষে থাকবে যোগ করেন তিনি। পরিবর্তন ডটকম