জাতীয় ঐক্যের ৫ দফা অসাংবিধানিক : ওবায়দুল কাদের

সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকার গঠন, বিচারিক ক্ষমতায় দিয়ে সেনা মোতায়েন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে জাতীয় ঐক্যের দাবিকে অপ্রাসঙ্গিক, অবান্তর, অপ্রয়োজন ও অসাংবিধানিক বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, এখন সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকার করার প্রয়োজন নেই। প্রতিবেশী দেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় ঠিক সেভাবেই নির্বাচন হবে আমাদের দেশে। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই।

রোববার ইনস্টিটউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) কাউন্সিল হলে সংগঠনটির ৪১তম কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের এক-দেড়মাস বাকি আছে। এখন মামাবাড়ির আবদার করলেতো চলবে না। সংসদের শেষ অধিবেশন অক্টোবর মাসের ২০ তারিখের আগেই শেষ হয়ে যাবে। এরপর আর সংসদ বসবে না নির্বাচন পর্যন্ত। এ সংসদ সদস্যদের কোনো ক্ষমতা ও কার্যকরিতা থাকবে না। কাজেই এটা ভেঙে দেয়া আর অন্যদেশগুলোর মতো রেখে অকার্যকরের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়, আমি বুঝতে পারি না।

সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে না, এটা আমরা বলবো না। প্রয়োজন হলে সেনা মোতায়েন হবে। যদি সময় এবং পরিস্থিতিতে মোতায়েন করা দরকার হয় এবং সেই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করলে, সরকার প্রয়োজনে এবং বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে কীভাবে মোতায়েন হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সময় নাই, এখানেতো বিএনপিরও প্রতিনিধি রয়েছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই রাষ্ট্রপতি এ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে।

যুক্তফ্রন্টের পাঁচ দফা বিএনপির দাবির সঙ্গে মিলে গেছে কি-না সাংবাদিকদের এমন লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মিলে গেল কি, গেল না-তা দেখা আমাদের বিষয় না। বিএনপি কার সঙ্গে যাবে, কীভাবে যাবে তা আমাদের বিষয় না। আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যুক্তফ্রন্টের নেতারা বলেছেন জামায়াতে ইসলাম থাকলে তারা বিএনপির সঙ্গে যাবে না। এখানেতো আমাদের কোনো মন্তব্য নাই। তবে নতুন নতুন জোট হলে স্বাগত, শত ফুল ফুটুক। গণতন্ত্রতো অসুবিধা নাই। নতুন নতুন জোট হোক নির্বাচন করুক।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের বিকল্প কি? আমাদের বিকল্প হচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। যারা ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত অত্যাচার, নির্যাতন করেছে। সেই নির্যাতন অন্ধকারে কি কেউ ফিরে যেতে চান? আমরা মনে করি না আমাদের সবকিছু শুদ্ধ, আমাদের ভুলত্রুটিও আছে। কিন্তু ভুল ত্রুটি সংশোধনের সৎসাহস শেখ হাসিনার রয়েছে। দলের মধ্যে কেউ অন্যায় করলে তাকে আমরা শাস্তি দেই। কিন্তু আমাদের বিকল্প যাদের ভাবেন, তারাতো নিজেদের লোকদের শাসন করেন নাই।

বিএনপি মহাসচিবের যুক্তরাষ্ট্র সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাহস থাকলে জনগণের কাছে নালিশ করুন। বিদেশে গিয়ে নালিশ করে দেশকে কেন খাটো করছেন। বলা হলো জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণ, বাস্তবে দেখা গেল এমন কোনো আমন্ত্রণ নাই। কী রকম তারা প্রতরণা করে, রাজনীতে ছদ্মবেশী প্রতারণা পার্টির নাম বিএনপি। বিএনপি এখন বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশ কান্নাকাটি পার্টি হয়ে গেছে।

বিএনপি নির্বাচনে না আসলে যুক্তফ্রন্টই বিএনপির বিকল্প কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা আমরা জানি না। তবে আমরা জানি বিএনপি না এলেও এবার প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব নাই, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরির কোনো সুযোগ নাই। সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই এবার নির্বাচিত হবে।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে নির্বাচনের দাবির প্রসঙ্গে কাদের বলেন, আমরা কি যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া, আফগানিস্তান, সোমালিয়া? আমরা কি সাউথ সুদান, কঙ্গো, ইরাক, জিম্বাবুয়ে? বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন পরিচালিত হবে। এখানে কোনো ব্যাতয়ের সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার সরকারই তত্ত্বাবধান করবে এবং নির্বাচন কমিশনই এ নির্বাচন পরিচালনা করবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, শনিবার গণভবনে আমাদের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন সভা-সমাবেশ করার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন যাতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে তা পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে দিতে। পুলিশ কমিশনারকে আজ তা জানিয়ে দিয়েছি আমি। পল্টনে, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমানে রাস্তাঘাট বন্ধ করে সমাবেশ করার প্রয়োজন নাই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উন্মুক্ত, যারাই অনুমতি চাইবে পুলিশ অনুমতি দিবে। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো বাঁধা ছিল না, পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক সময় অনেককেই অনুমতি দেয় না। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন নিবন্ধিত যেসব দল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি চাইবেন কোনো সমস্যা হবে না। সবাই অনুমতি পাবে।

আইডিইবি সভাপতি এ কে এম হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান।