ইভিএমে ১ কে ১০ বানানো যায়, ১০০ বানানো যায় : ফখরুল

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার তৈরি করুন। নির্বাচনের সময় অবশ্যই সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করতে হবে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে। আমরা বলেছি সকল দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। আর ইভিএম চলবে না। ইভিএমে ১ কে ১০ বানানো যায়, ১০০ বানানো যায়।’

বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় ফখরুল এসব কথা বলেন।

বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সরকার ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার ভালো করেই জানে- মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে তাদের অবৈধ ক্ষমতার তখতে তাউস জনগণ ধুলোয় উড়িয়ে দেবে। সেই ভয়ে সরকার দেশনেত্রীকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাড়ে চার হাজার গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে। তারা (সরকার) এখন ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। সরকার বুঝতে পেরেছে বিএনপি নির্বাচনে গেলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র করছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করুন। যে নির্বাচনে আমার কথা বলার সুযোগ থাকবে না, ভোট দেয়ার সুযোগ থাকবে না, জনগণ ভোট দিতে পারবে না। সেই নির্বাচন কী নির্বাচন হবে? হবে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা পরিস্কার করে বলেছি, আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন চাই। করতেও হবে তাই। এখন কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই, সব দলের সমান অধিকার নাই। ওরা ছাড়া আর কেউ নাই। নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে শুধুমাত্র তাদেরই কথা শুনবে, অন্য কারো কথা শুনবে না। নতুন করে বলার দরকার নেই, চারটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আমরা তা দেখেছি।’

জাতীয় ঐক্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের ডাক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই দিয়ে গেছেন। এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে শুধু ২০ দল নয়, সমস্ত রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে এই সরকারকে বাধ্য করি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে।’

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই ঘটনা যখন ঘটে তখন আমরা সাথে সাথে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। জোট সরকার ঘটনা তদন্ত করবার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও ইন্টারপোলকে নিয়ে এসেছিল। তারা তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে যেতে পারেননি। কেনো? প্রধান ভিকটিম দাবি করা হচেছ আজকের প্রধানমন্ত্রী ও তার দল সেদিন সহযোগিতা করেন নাই। যে গাড়িতে তিনি গিয়েছিলেন, বুলেটের ছোয়া লেগেছিলো তাদেরকে পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়নি। এই মামলার তিনি (শেখ হাসিনা) ছিলেন দুই নম্বর সাক্ষী, তিনি কোনো দিন আদালতে গিয়ে কোনো সাক্ষ্য দেননি। জানি এসব কথা মিডিয়াতে আসবে না। কিন্তু দ্যাট ইজ দ্যা ফ্যাক্ট, এটাই সত্য। তারেক রহমান সাহেবকে আসামি করেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করেছেন। আজকে তিনজন পুলিশের আইজি তারা কারাগারে, সেনাবাহিনীর তিনজন অত্যন্ত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা কারাগারে, এই মামলায় তাদেরকে জড়ানো হয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘তারেক রহমান সাহেবকে কখন জড়ানো হলো? এই মামলা রজ্জু করার পরেই তদন্ত হয়েছে। পরপর তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হয়েছে। এরমধ্যে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিনের শাসনকাল গেছে দুই বছর। তারাও কিন্তু তারেক সাহেবর নাম দেয়নি, আবদুস সালাম পিন্টুর নাম দেয়নি। এই নামগুলো পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের সরকার আসার পরে ঢুকানো হয়েছে। মুফতি হান্নানকে ২৪৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে নিমর্মভাবে নির্যাতন করে তার কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করে এটা করা হয়েছে। রিমান্ডের পর প্রথম যখন আদালতে আসেন তিনি বলেছেন, আমাকে জোর করে এই স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। এটা সেকেন্ড স্টেটমেন্ট। আইনের কথায় প্রথম ১৬৪ যথেষ্ট, সেখানে দ্বিতীয় ১৬৪ গ্রহণযোগ্য নয়। তারা দ্বিতীয় ১৬৪ গ্রহণ করে তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। আল্লাহ এই অন্যায় ও মিথ্যাচারকে সহ্য করবেন না। আজকে আপনারা নিজেরা বিচারালয়ে নিয়ে নিয়েছেন, বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ে নিয়েছেন। আজকে আপনাদের মতো করে যা খুশি তা করতে পারেন। কিন্তু উপরওয়ালা একজন আছেন তিনি বিচার করবেন, সঠিক ন্যায় বিচার হবে। সেই বিচারের জন্য অপেক্ষা করুন, সেই বিচারের সামনে আপনাদেরকে দাঁড়াতে হবে।’

ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা সংসদকে ধ্বংস করেছে, তারা বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে, তারা প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলেছে। মিডিয়াকে জবরদস্তি নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, এই সরকারের একদিন বিচার হবে। বাংলাদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেবার জন্য তাদের বিচার হবে।’

উন্নয়নের নামে সরকারে অর্থ লুন্ঠন করছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মেগা প্রকল্প। আজকে উন্নয়নের এমন মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে যে, পদ্মাসেতু এখন পর্য্ন্ত এর তল খুঁজে পায় নাই। তিন চারটা পিলার হয়েছে, বাকীগুলোর তল খুঁজে পাচ্ছে না। আর এমন নদী শাসন করেছে যে, এখন শরীয়তপুরের নড়িয়া ভেঙে নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে । ইতিমধ্যে সাত হাজার লোক গৃহহারা হয়ে গেছে। ভারত থেকে পাইপ লাইন বসানো হচ্ছে তেল নিয়ে আসার জন্য, নতুন নতুন বন্দর তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে যে বন্দরের দরকার আছে কি নাই সেটাও চিন্তা করা হচ্ছে না। সব মিলে উদ্দেশ্য একটাই- ব্যাপক দুর্ণীতি। জনগনের টাকা উন্নয়নের নামে দুর্ণীতি করে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফলে এসব উন্নয়ন জনগনের কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসছে না।’

জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নূর হোসেন কাসেমীর সভাপতিত্বে মতবিনিয় সভায় আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, জাগপার খোন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন আহমেদ মুনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম।