ভালোভাবে দেখুন, জানুন, বুঝুন: সিইসি

কোনটা ভালো কোনটা মন্দ সবকিছু প্রশিক্ষণ দিয়ে শেখানো যাবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।

আগারগাঁওস্থ ইটিআই ভবনে শনিবার সকালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ বিষয়ে কর্মশালায় সিইসি এ কথা জানান।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, ‘আপনারা মাঠপর্যায়ের দায়িত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ। নির্বাচন পরিচালনার নানাবিধ অভিজ্ঞতা আপনাদের আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন প্রত্যেকটা স্তরে আপনাদের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সুতরাং কোনটা ভালো কোনটা মন্দ এটা সবকিছু প্রশিক্ষণ দিয়ে আপনাদেরকে শিখানো যাবে না। নিজেদের বিবেক, বিবেচনা, বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেদেরকে প্রস্তুত করে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভালোভাবে আপনারা আপনাদের জ্ঞান অর্জন করবেন এবং সেটাকে প্রয়োগ করবেন।’

সিইসি আরো বলেন, ‘আমাদেরকে বলা হয় নির্বাচনী রেফারি। নির্বাচনের খেলায় বা নির্বাচনী যুদ্ধে কে জিতবে আর কে হারবে সেই ফলাফলটাই শুধু আমরা ঘোষণা করবো এবং শৃঙ্খলার মধ্যে সুশৃঙ্খলভাবে। আপনারা মাঠপর্যায়ের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।’

‘জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ সালের শেষে বা ২০১৯ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন স্বার্থক, গ্রহণযোগ্য করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। আপনাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক বড়। আপনাদের দীর্ঘদিনের নির্বাচন পরিচালনা ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা রয়েছে।’

‘সেক্ষেত্রে আপনারা জানেন কোথায় কী অসুবিধা আছে। প্রশিক্ষণের সময় নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও প্রশিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সেই সমস্যা সমাধান করে তা কাজে লাগাবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আপনাদের থেকে অনেক দূরে। সুতরাং সবকিছু আপনাদের উপর নির্ভর করে। আপনাদের পরিশ্রম, ত্যাগ এবং কার্যক্রম তার উপরই নির্বাচন কমিশনের স্বার্থকতা নির্ভর করে। সংসদ নির্বাচনের আর বেশিদিন নেই। আমরা প্রস্ততি নিচ্ছি। এখন থেকে এই প্রস্তুতির প্রথম পর্ব শুরু হলো।’

ইভিএম নিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ, প্রশ্ন থাকবেই। তার কারণ মানুষের ভোট একটা পবিত্র আমানত। সেটা কোথায় দিলো, কিভাবে দিলো সেটা জানার আগ্রহ থাকবে না, সেটা হতেই পারে না। কিভাবে এটার ব্যবহার হবে সেটা যদি না জানে তাহলেতো মানুষের মধ্যে প্রশ্ন থেকেই যাবে। সুতরাং আমাদের প্রয়োজন হবে যত তারাতাড়ি সম্ভব ইভিএম কী, কী উপকারিতা সেটা আপনাদের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের অবস্থান আগে যেরকম ছিল, এখনো সেরকমই আছে। ইভিএমে যদি আপনারা সফল হন, আপনাদের যদি ইভিএম ব্যবহারের যোগ্যতা অর্জন হয় এবং ইভিএম যদি আইনগত ভিত্তি পায়। এখন পর্যন্ত সেটা পাইনি। আমি বারবার বলেছি, আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যদি আইনগত ভিত্তি পায় তবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এবং যেই ইভিএম আছে সেটা যদি ব্যবহার উপযোগী হয়, কোনো ত্রটি না থাকে কেবল তখনই ব্যবহার করা হবে। তবে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের একটা স্বপ্ন আছে। সেটা বাস্তবতার নিরিখে।

ভালোভাবে দেখুন, জানুন, বুঝুন

সিইসি বলেন, ‘আমি আবারও বলি ইভিএম নিয়ে আমাদের অবস্থান আমরা যতটুকু পারবো, সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়ে ততটুকু ব্যবহার করবো। অতিরিক্ত চাপিয়ে দেয়া বা অতিরিক্ত অবস্থানে আমরা যাবো না। এর দায়িত্ব নেবো না।’

তিনি বলেন, ‘নতুন একটা জিনিস ব্যবহার করতে গেলে সেটি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকলে বা সেটি সম্পর্কে জানতে না পারলে মানুষের মনে প্রশ্ন থাকবেই। কারণ এটি জনসাধারণকে নিয়ে বিষয়, ব্যক্তিগত বিষয় নয়। প্রত্যেকটা ভোটারকে নিয়ে বিষয়।’

‘কাজেই তাদের ভোট সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলো কি না, এটা অবশ্যই তাদের জানার এবং বোঝার অধিকার আছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, অবশ্যই তাদের জানার এবং বোঝার অধিকার আছে।’

‘তবে আমার একটি অনুরোধ থাকবে, এটাকে আপনারা আগে ভালোভাবে দেখুন, জানুন, বুঝুন। তারপর এটা ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না প্রশ্ন করা যায়। এককভাবে কোনোকিছু জানলাম না, বুঝলাম না বললাম এটা ব্যবহার করা যাবে না, এই অবস্থান থেকে একটু বেরিয়ে আসতে হবেল’

ম্যানুয়াল ভোটিং কষ্টসাধ্য

তিনি বলেন, ‘ম্যানুয়াল ভোটিং সিস্টেম অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। কাজেই আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর অবস্থানে আমাদের অবশ্যই প্রবেশ করতে হবে। আধুনিক, বিশ্বাসযোগ্য এবং সঠিক একটা প্রযুক্তির মধ্যে আমাদের যেতে হবে। যে প্রযুক্তি এখন আছে এটা হতে পারে, আবার কিছুদিন পর আরো উন্নত প্রযুক্তি আসতে পারে। এখন করেন আর পরে এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।’

‘আমাদের ৯০ লাখের মতো ভোটার আছে দেশের বাইরে। যারা ভোট দিতে পারে না। এমন প্রযুক্তি আসবে এখানে না এসেও তারা ভোট দিতে পারবেন। এমন প্রযুক্তি আসবে ভোটকেন্দ্রে না গিয়েও ভোট দেয়া যাবে। এমন একটা অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে এসে গেছে’।