সরকারবিরোধীদের অভিযোগ সত্য নয়: জয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ করছেন সরকার বিরোধীরা। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ এবং আসন্ন নির্বাচনও সে রকমই হবে বলে দাবি করছেন। তারা ভুল; তাদের কোনো অভিযোগই সত্য নয়।

শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্সে প্রকাশিত এক কলামে তিনি এ কথা লিখেছেন।

সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন- আসলে সত্য হল বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গত নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পর তারা অভিযোগ করে খুব কম রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। ফলে তা লজ্জার। এটি ছিল তাদের স্বার্থে সাজানো অভিযোগ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের অপূর্ণতার দায় পুরোটাই বিএনপির, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নয়। নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে সংসদের জন্য একজন প্রার্থীও দেয়নি বিএনপি।

তিনি লিখেছেন- ২০১৪ সালে বিএনপি নেতা ও তাদের জোটের শরিকরা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মিলিতভাবে সহিংস বিক্ষোভ শুরু করে। তারা এবং তাদের সহযোগীরা হাজার হাজার বাড়ি, গাড়ি, ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস করেছে, ২০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেছে এবং সরকারি স্থাপনায় আগুন দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে লিখেছেন- এতকিছুর পরও বিএনপি কখনও এই অদূরদর্শিতার দায় স্বীকার করেনি। যখন বিএনপি সম্পর্কিত উসকানিদাতারা বিচার এড়াতে পালিয়ে যান, তখন দলটি দাবি করে জোর করে তাদের নেতাদের গুম করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করেছে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে তারা জানতে পেরেছে- সহিংস অপরাধে বিচার এড়াতে তাদের অনেকে নিজেরাই ‘অদৃশ্য’ হয়েছেন।

কলামে জয় বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের গুম ও ফিরে আসার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে অভিযোগ ওঠে সালাউদ্দিন আহমেদকে অপহরণ করেছে পুলিশ। দুই মাস পর ভারতে তার সন্ধান মেলে। এর পর আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। তদন্ত করে জানা যায়, বাংলাদেশে বিচার এড়াতে তিনি ভারতে পালিয়েছিলেন। বাকিদেরও খুব দ্রুতই সন্ধান মেলে। হারিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই সন্ধান মেলে বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারের।

জয় লিখেছেন- সরকার আশা করছে যে, বিএনপি এই ভুলগুলো স্বীকার করে গঠনমূলকভাবে লড়াই করবে, সহিংসতার মাধ্যমে নয়। বাংলাদেশ বিরোধী দলের কাছ থেকে এতটুকুই আশা করে। তবে বিএনপির কয়েকজন মনে করেন, তাদের পক্ষে গঠনমূলক কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে আছেন এবং তাকে মুক্ত করার জন্য তারা আন্দোলন-সংগ্রাম ও সহিংসতা চালানোর চেষ্টা করবেন। এমনকি নির্বাচন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করতেও তারা চেষ্টা চালাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, যদি এমনটি হয়, তবে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে। এতিমদের আড়াই লাখ ডলারেরও বেশি টাকা আত্মসাতের কারণে বেগম জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৯টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পাঁচটি দুর্নীতির মামলা রয়েছে। আর বাকি ১৪টি ২০১৪ সালের সহিংসতা সংশ্লিষ্ট।

তিনি লিখেছেন, খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এতিমদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তিনি মানিলন্ডারিংয়ের জন্যও অভিযুক্ত। এ মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তথ্য সরবরাহ করেছে। এ ছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও শেখ হাসিনাসহ ৩০০ জন আহত হওয়ার ঘটনাতেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। অন্যান্য নেতার মতো তারেক রহমানও বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

জয়ের মতে, ‘একজন ব্যক্তির অনুপস্থিতি’ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কোনো অজুহাত হতে পারে না।