সুশাসন নিশ্চিত হলে অর্থনীতিতে অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের অর্থনীতির চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল ‘বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট’ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে এই প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাপক অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপক হারে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি আরো দ্রুত করা সম্ভব যদি অর্থনীতিতে কিছু সংস্কার আনা যায়।

এতে বলা হয়, এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে যদি সুশাসন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। এই ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগ, রপ্তানি বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন জরুরি। এ ছাড়াও সরকারের উচিত ব্যবসাকে সহজ করা, দীর্ঘমেয়দী কাজগুলো দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা, সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা ও পর্যাপ্ত বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা। বিকল্প জ্বালানির বিষয়টি গুরত্বসহ উঠে আসে প্রতিবেদনে।

বর্তমানে যা গ্যাস মজুত আছে তা পর্যাপ্ত নয়। আরো গ্যাসক্ষেত্রের অনুসন্ধান, গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো কিংবা সম্ভব হলে প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আনাও যেতে পারে। বিশ্বব্যাংক কিছু প্রস্তাবনাও উপস্থাপন করে প্রতিবেদনে।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিও ফান বলেন, বাংলাদেশ দারিদ্র্যতা দূর করতে স্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছে এবং নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের ১০ দ্রুততম অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশের মাঝে বাংলাদেশ অন্যতম এবং মানবসম্পদ উন্নয়নেও রেখেছে অসাধারণ ভূমিকা। দেশে সুশাসন বজায় থাকলে এই অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে না। এই অগ্রগতিকে ধরে রাখতে উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে, নতুন নতুন আবিষ্কার ও কাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের উচিত শিক্ষা, দক্ষতা, খাদ্যের মান বৃদ্ধি করা। সেইসঙ্গে টেকনোলজি ও বৈশ্বয়িক চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে পণ্য উৎপাদন করা।

প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ নিয়ে বলা হয়, আগামী বাজেটে খেলাপি ঋণের কারণে চাপ আসতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকে ৪৮ শতাংশ খেলাপি ঋণ ও দেশে বর্তমানে ঋণ খেলাপির পরিমাণ ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। ফলে মূলধনে ঘাটতি দেখা দেবে। মূলধন ঘাটতি রুখতে সুদের হার ও সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো প্রয়োজন বলে মত দেয় বিশ্বব্যাংক। রাজস্ব ব্যবস্থায় প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শও দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগের তুলনায় অনেক ভালো। এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম এটাও ধরে রাখতে হবে। অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর বলেন, আমাদের মেগা প্রকল্পের বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ঋণের ওপর নির্ভরশীল সব প্রকল্প। এই নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

আমাদের যাতে ভবিষ্যতে ব্যাপক পরিমাণ ঋণের বোঝা ঘাড়ে না চাপে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রকল্পের সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় বাড়তে থাকে। এটা অর্থনীতির জন্য খুবই ক্ষতিকর। তিনি আরো বলেন, আমরা মধ্যম আয়ের কথা বললেও দেশের ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ দরিদ্র। তাদের উন্নয়নে অতিদ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। প্রতিবছর বিদেশে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু রেমিটেন্স কমছে কেন তা বিবেচনায় আনতে হবে।