আজ গ্রেনেড হামলা মামলার রায়

আজ বুধবার বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায় ঘোষণা করবেন।

আসামি ও রাষ্ট্র পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মনে করেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা করছেন তারা। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, মুফতি হান্নান ছাড়া বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী কিছু বলেনি। কোনো সাক্ষ্য প্রমাণও নেই। এরপরও সাজা দেয়া হলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেয়া হবে।

আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। আমরা ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা করছি। মুফতি হান্নান ছাড়া বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী কিছু বলেনি। এরপরও সাজা দেয়া হলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, আইনের বিধান মোতাবেক কোনো আসামির স্বীকারোক্তি দিলে তার ভিত্তিতে শুধু ওই আসামিকে সাজা দেয়া যায়। অন্য আসামিকে সাজা দিতে হলে অন্য সাক্ষী থাকতে হবে। শুধু কোনো কো-আসামির স্বীকারোক্তি দিয়ে অন্য আসামিকে সাজা দেয়া যায় না। যদি তার বিরুদ্ধে ভিন্ন কোনো সাক্ষী না থাকে। মুফতি হান্নান যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা লিখিত এটা সঠিক নয়। পুলিশ সাদাকাগজে স্বাক্ষর নিয়ে এই বক্তব্য দিয়েছে। আদালতে সে লিখিতভাবে বলেছে এই বক্তব্য সঠিক নয়, এটা তার বক্তব্য নয়, এটা জোর করে নেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, যুক্তিতর্কে বলেছি সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে এ মামলা প্রমান করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেছি। বিচারাধীন কোন মামলায় কোন মন্তব্য করা যায় না। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে বিএনপি নেতাদের এ মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে? এমন বিষয়ে তিনি বলেন, আসামিপক্ষের এই অভিযোগ সঠিক নয়।

মামলার কার্যক্রম : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শত নেতা-কর্মী।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই এ সংক্রান্ত হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা দুটির বিচার শুরু হয়। ৬১ জনের সাক্ষ্য নেয়ার পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এসে এর অধিকতর তদন্ত করে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, জামায়াতের নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে নতুন করে আসামি করে ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।

দুই অভিযোগপত্রের মোট ৫২ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। অন্য মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৪৯। মামলার আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছে। তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল এটিএম আমিন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। জামিনে ৮ জন এবং কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন । গ্রেনেড হামলার দুই মামলার রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২২৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর উভয়পক্ষের বক্তব্যে শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।