গণফোরাম সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হেসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের ঐক্যফ্রন্টের কর্মকাণ্ড শুরুর পর আওয়ামী লীগকে তাদের নির্বাচনী কৌশল নতুনভাবে ভাবতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক নেতারা। এই জোটকে এখন বিবেচনায় নিয়ে তারা এবারের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন।
তবে একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাদের বিরোধী জোট শেষপর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, তা নিয়েও তাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীনদের নতুন জোটের প্রতি নজর রেখে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল চিন্তা করতে হচ্ছে।
নির্বাচনী কৌশলের ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনার জন্য শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, সংসদীয় দল এবং উপদেষ্টা পরিষদ যৌথ বৈঠকে বসছে। দলটির সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠক হচ্ছে।
যদিও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট গঠনের প্রক্রিয়ার সময় স্বাগত জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু পরে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। দলটির সবপর্যায়ের নেতারা মাঠের বক্তৃতায় এবং এমনকি সংসদেও নতুন জোটের কড়া সমালোচনা করছেন।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগ তাদের বিরোধী জোটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছে। দলটির নেতাদেরও অনেকে বলেছেনে, এখন তাদের কৌশল নতুনভাবে সাজাতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে বলেছে, আওয়ামী লীগ তাদের বিরোধী রাজনৈতিক জোটকে বিবেচনায় নিয়েই নির্বাচনী কৌশল ঠিক করছে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই জোটকে আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি দু’টি কারণে। একটি হচ্ছে, আমাদের বিদেশী বন্ধু বা উন্নয়ন সহযোগীরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে কথা বলে,সেই প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রেখেছি। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো, ওয়ান ইলেভেনের ২০০৭ সালে যারা কুশীলব ছিল,সেই কুশীলবরা এই ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছে। এখন তারা যদি নির্বাচনটাকে বানচাল করার বা পিছিয়ে নেয়ার বা অন্য কোনো অপশক্তি বা অসাংবিধানিক কোনো শক্তি আনার প্রক্রিয়া করে, সে ব্যাপারে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তবে আমরা এটা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করব।’
বিএনপিসহ এই জোটের এবার নির্বাচন বয়কটের সম্ভাবনা কম বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন। দলটির নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপিসহ এই জোট নির্বাচনে এলে সেই পরিস্থিতিকেও আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছি।
তিনি বলেন, যদি বিএনপি আসে তাহলে প্রার্থী মনোনয়নে আমাদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। যাদের যোগ্যতা আছে, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাদের প্রার্থী করতে হবে।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, অনেক নেতাকর্মী এবং এমপি-মন্ত্রীরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আমাদের দলের সভানেত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন, যে প্রয়োজন হলে উনি নিষ্ঠুর হবেন। একজন মন্ত্রী, তাই তাকে মনোনয়ন দিতে হবে, সেটা উনি মনে করছেন না। এবার নির্বাচন অনেক চ্যালেঞ্জিং, এই নির্বাচনে ভালো প্রার্থী দিয়ে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির নেতারাও এবার নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী বিরোধী প্লাটফর্মের গতিবিধি এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ কী হয়, সেটা বুঝেই আমরা আমাদের কৌশল ঠিক করব।’ সূত্র: যুগান্তর