রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি : খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত বছরের সাজার রায়কে ফরমায়েশি আখ্যায়িত করে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যানের কথা জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। আজ সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের ১ নম্বর হলে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই রায় প্রত্যাখ্যানের কথা জানান তিনি।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়া হাইকোর্টে বিচার পাননি। আপিল বিভাগেও বিচার পেলেন না। আজকের রায় ফরমায়েশি। দেশের মানুষও ঘৃণাভরে এ রায় প্রত্যাখ্যান করছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি জানান তিনি।

জয়নুল আবেদীন বলেন, আজকে আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। খারিজ হলেও রায়ে অনেক বিষয় থাকে। কিন্তু সেটা না দেখেই আজকে আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছর সাজা দিয়েছেন। এটা দুঃখজনক।

আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সরকার ও আওয়ামী লীগের অধীনস্ত সংগঠন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজকে দুদক এবং আওয়ামী লীগ এক হয়ে গেছে।’

খোকন বলেন, ‘আমরা হতবাক হয়েছি। সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই রায় শুরু হয়ে গেল। কি যোগাযোগ! বিচার বিভাগে এটা নজিরবিহীন। এ রায়ের মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন নজির স্থাপন হয়েছে।’

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আজ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালতের বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন একই আদালত। রায় ঘোষণার পর পরই খালেদা জিয়াকে ওই দিন বিকেলে (৮ ফেব্রুয়ারি) নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় আজ রায়ের সময় আদালতে হাজির ছিলেন না। এমনকি এই মামলার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তাঁর কোনো আইনজীবীও যাননি রায় শুনতে। তবে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে হাজির ছিলেন।

এই মামলার অন্য তিন আসামি হলেন—খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এঁদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। বাকি দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত আজ এই তিনজনকেও অভিন্ন সাজা দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে উপস্থিত দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

একই সঙ্গে রায়ে যে ৪২ কাঠা জমির ক্রয় নিয়ে মামলার সূচনা, সেই জমিটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

রায়ে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার না করে, তার জন্য আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের ক্ষেত্রে ১৫টি বিষয় বিবেচনায় নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আদালত।

এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে না আসায় তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান আদেশ দেন।

এ আদেশ বাতিল চেয়ে রিভিশন আবেদন করলে ১৪ অক্টোবর হাইকোর্ট আবেদন খারিজ করে দেন। পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ১৫ অক্টোবর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

এরপর ১৬ অক্টোবর বিচারিক আদালত এ মামলার রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। এ অবস্থায় আজকের জিয়া চ্যারিটেবল মামলার রায় হবে কি না, তা অনেকটা আপিল বিভাগের পরবর্তী আদেশের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ে। আপিল বিভাগের আদেশের পর সেই বাধা কেটে যায়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের একটি কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করেন। ৫ সেপ্টেম্বর সেখানে আদালত বসে। কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া সেদিন আদালতে হাজির হয়ে আদালতকে বলেছিলেন, এ আদালতে ন্যায়বিচার নেই। তিনি অসুস্থ। আদালতে আসবেন না। যত দিন ইচ্ছে আদালত তাঁকে সাজা দিতে পারেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ।