বাগেরহাটে পরিবহন ধর্মঘটে চড়ম ভোগান্তি, মোংলা বন্দরে পন্যের জট

সড়ক পরিবহণ আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে বাগেরহাটে দুরপাল্লাসহ সকল রুটে দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহণ ধর্মঘট চলছে। ধর্মঘটের ফলে চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব ধরণের মানুষ চড়ম ভোগান্তিতে পড়েছেন। যাত্রীদের কয়েকগুন বেশি ভাড়া দিয়ে ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক, মাহেন্দ্র ও ভাড়ার মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌছাতে হচ্ছে।

এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে মোংলা বন্দর জেটি, ইপিজেড ও শিল্প এলাকার অফিসিয়াল কার্য্ক্রম স্বাভাবিক থাকলেও ভোগান্তিতে পড়ছেন আমদানি-রপ্তানি কারকরা।পন্যের জট সৃষ্টি হয়েছে মোংলা বন্দরে।চড়ম ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা। মোংলা বন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় পন্য বোঝাই জাহাজ অপেক্ষমান থাকলেও পরিবহন ধর্মঘটের কারণে মালামাল আনলোড করতে পারছেনা। এছাড়া রপ্তানির জন্য কোন পন্যও সড়ক পথে বন্দরে আসতে পারছে না। রবিবার (২৮ অক্টোবর) ভোর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে এই ধর্মঘট শুরু হয়। ধর্মঘটের পরেই স্বতস্ফুর্তভাবে জেলার সকল প্রকার পরিবহন বন্ধ রাখে শ্রমিকরা। এতে চড়ম ভোগান্তিতে পড়ছেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।

সোমবার (২৯ অক্টোবর) সকালে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দেখা যায় যেখান থেকে বাস ছাড়ে সেসব জায়গায় কোন বাস নেই। জরুরী প্রয়োজনে যারা বাড়ি থেকে বের হয়েছেন, নির্বাক দাড়িয়ে আচেন মলিন মুখে। কিছু ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল বাস টার্মিনালে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া হওয়ার কারণে সাধারণ যাত্রীরা যেতে পারছেন।

ব্সাটার্মিনালে অপেক্ষমান খুলনাগামী মহিউদ্দিন শেখ বলেন, খুলনা যাব রোগী দেখতে, সকাল থেকে দাড়িয়ে আছি কিন্তু গাড়ির চলছে না যেতেও পারছি না।

সাবিকুন নাহার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সারাদেশে ধর্মঘট চললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা নিয়মিত চলছে। তাই যত সমস্যা থাকুক না কেন যেতেই হবে।

এছাড়া কয়েক জন যাত্রীর সাথে কথা হয়। তারা বলেন, পরিবহণ ধর্মঘটের কারনে আমাদের বাড়তি ভাড়া দিয়ে বিকল্প যানে করে গন্তব্যে পৌছাতে। শ্রমিকদের সাথে বসে সমস্যার সমাধান করতে সরকারের কাছে দাবী জানান তারা।

পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রবিবার সকাল থেকে মোংলা বন্দর জেটি হতে আমদানী-রপ্তানীযোগ্য পণ্য খালাস ও পরিবহন কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার উৎপাদিত পণ্য সিমেন্ট, গ্যাস, তেল, জিপার, জুট সরবারহ করতে না পারায় চরম বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মোংলার বিভিন্ন কারখানাতে উৎপাদিত পন্য অন্যকোথাও যেতে পারছে না।

বন্দর ব্যবহারকারী মের্সাস মায়া এন্টারপ্রাইজের মালিক আহসান হাবিব হাসান শনিবার বন্দরে আসা একটি জাহাজে তার মালামাল সরবরাহের কথা কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সেই মালামাল না আসায় তিনি তা সময় মত সরবরাহ করতে পারছেন না। এতে বিদেশী জাহাজ ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি চরম ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে।

বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাষ্ট্রিজ এবং বাগেরহাট ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত লিটন বলেন, আনি নিজেও একজন আমদানি কারক। শীত উপলক্ষে আমি বেশকিছু পন্য আমদানি করেছি। অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। তারপরও শুধু পরিবহনের অভাবে পন্য নিতে পারছিনা। আমার মত অনেক ব্যবসায়ী এ ধরণের সমস্যায় পরছেন। তবে আজ বিকেল নাগাদ শ্রমিকদের পক্ষ থেকে একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তাহলে পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হবে।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি বাহারুল ইসলাম বাহার বলেন, সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে মোংলা বন্দর, নওয়াপাড়া, শিরোমনিসহ সকল নদী বন্দরে পন্য বোঝাই জাহাজ অপেক্ষমান রয়েছে। যার ফলে মালিক ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। ভোগান্তিতে পড়ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের জন সংযোগ কর্মকর্তা মোঃ মাকরুজ্জামান বলেন, বন্দরের অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। লোডিং-আনলোডিং সবই চলছে। তবে সড়ক পথে মালামাল ডেলিভারি নিতে পারছেনা ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজার) জনসংযোগ বিভাগ জানায়, মোংলা ইপিজেডের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া আমরা সব সময় চেষ্টা করি দেশি-বিদেশী বিনোয়োগগকারীদের যাতে কোন প্রকার সমস্যায় না পড়তে হয়।