যে কারণে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ালেন আদালত

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে এ মামলার অন্য পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু মামলার অন্য আসামিদের তুলনায় প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার সাজা কম হওয়ায় তা বাড়ানোর জন্য আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করেন এ মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান। এই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি ছয় আসামির প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

বাকি চার আসামি হলেন সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এদের মধ্যে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈতবেঞ্চ তিন আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণের আদেশ দেন। একইসঙ্গে আসামি খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর জন্য রিভিশন আবেদন করে দুদক।

দুদকের আবেদনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা কেন বাড়ানো হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ২৮ মার্চ রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসসহ উভয়পক্ষ মোট ৩২ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এরপর এ মামলায় খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্টের ওই একই বেঞ্চ। কিন্তু সে জামিনাদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিল বিভাগ গত ১৬ মে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখেন এবং ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে নির্দেশ দেন।

ওই নির্দেশের ধারাবাহিকতা হিসেবেই আপিল নিষ্পত্তির সময় বৃদ্ধি চেয়ে পুনরায় রিভিউ আবেদন দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে ৩১ অক্টোবর সময় দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু এরপরও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল নিষ্পত্তিতে আরও সময় বৃদ্ধি চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করলে তা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্টে আপিল শুনানিতে হাজির না হওয়ায় মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায়ে কোনও পর্যবেক্ষণ কিংবা সাজার কারণ উল্লেখ করেননি। হাইকোর্টের আপিলের রায়ে বলা হয়- মামলার তিন আসামির করা আপিল আবেদন (খালাস চেয়ে) খারিজ করা হলো। একইসঙ্গে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে তাকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হলো।

এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে দুদক আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এই মামলার মুখ্য (প্রধান) আসামি খালেদা জিয়া এবং এ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন। মামলার অন্যান্য আসামির ১০ বছর করে সাজা হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া মুখ্য আসামি হওয়ার পরও তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। এ কারণে আমরা রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন করেছিলাম। আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে তার সাজা বৃদ্ধি করেছেন।’

একই বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমরা রায় এখনও দেখিনি। তবে অনুমান করতে পারি, সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে খালেদা জিয়াই এই মামলার মুখ্য আসামি। তাই এ মামলায় অন্যান্য আসামি যেখানে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেখানে মামলার মুখ্য আসামি তাদের চেয়ে কম সাজা পেতে পারেন না। এজন্যই সবার সাজা ১০ বছর করা হয়েছে।’