ইতিহাস হয়ে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ: কাদের সিদ্দিকী

সংলাপের আহ্বানে সাড়া দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তার কঠোর সমালোচকদের একজন আবদুল কাদের সিদ্দিকী। বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তার এই উদ্যোগ ইতিহাসে লেখা থাকবে।

বুধবার মতিঝিলের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জনতা লীগ নেতা। জানান, তার রাজনৈতিক অবস্থান জানতে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

গত রবিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন সংলাপে বসার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন। পরদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সংলাপে রাজি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই আলোচনা হবে গণভবনে।

পরদিন বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকেও সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সংলাপ চেয়ে চিঠি দিয়েছে সরকার প্রধানকে।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘রাজনীতি করতে হলে চাড়াল-মুচির সাথেও আলোচনায় বসতে হয়। যাদের কাছ থেকে আজকে পোড়াগন্ধ আসছে তার সাথেও আলোচনা করতে হয় এবং শেখ হাসিনা সেই কাজটিই করে মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন।’

‘প্রধানমন্ত্রীর এই সংলাপের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। এই সময়ে এই সংলাপ দেশের জন্য একটি মাইলফলক। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই তিনি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন।’

‘সংলাপ ডাকার আগে দেশে অস্থিরতা ছিল। এখন তা অনেকটাই কেটে গেছে। এই উদ্যোগ এবং পদক্ষেপ মাইলফলক হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে লেখা থাকবে।’

কামাল-বি.চৌধুরী এক হলেই ঐক্যে যাবেন কাদের সিদ্দিকী

সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী জানান, ড. কামাল হোসেন এবং বি. চৌধুরী এক হতে পারলেই তিনি সেই ঐক্যে যাবেন।

২০১৬ সালের শেষে বি. চৌধুরীর বিকল্পধারা, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের পাশাপাশি কাদের সিদ্দিকীর জনতা লীগ নিয়ে গঠন করা হয় যুক্তফ্রন্ট। সেখানে থাকার কথা ছিল ড. কামাল হোসেনের গণফোরামেরও। কিন্তু বিদেশে থাকা অবস্থায় জোটের ঘোষণাকে সহজভাবে নেননি তিনি। পরে কাদের সিদ্দিকীও সরে যান সেখান থেকে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কামাল হোসেন এবং বি. চৌধুরীর মধ্যে একাধিক বৈঠক হয় এবং দুই পক্ষই একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেন। তবে গত ১৩ অক্টোবর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং আরও কয়েকজন ব্যক্তি নিয়ে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়, সেখানে বাদ পড়ে যান বি. চৌধুরী। জোট গঠনের আগে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার শর্ত দিয়েই মূলত বাদ পড়েন তিনি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ১২ দিন পর ২৫ অক্টোবর কামাল হোসেনের বাসায় তার সঙ্গে দেখা করেন কাদের সিদ্দিকী। ফ্রন্টের সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যের প্রতি জানান সমর্থন। সেদিন থেকেই কাদের সিদ্দিকীও ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিচ্ছেন কি না, সে নিয়ে গুঞ্জন উঠে।

সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সবাইকে নিয়ে একটি সার্বিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সার্বিক ঐক্যের মধ্যে বি চৌধুরী এবং গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এক মঞ্চে থাকবেন, আমি সেই ঐক্য চাই।’

‘আমার রাজনৈতিক অবস্থান জানাতে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। এদিন জেল হত্যা দিবসের আলাচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন ড. কামাল হোসেন। এই আলোচনা সভায় বি চৌধুরী থাকতে পারে। আজ রাতে ডা. কামাল হোসেনকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এতে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।’

কাদের সিদ্দিকীকে জোটে পেতে আগ্রহী তার সাবেক দল আওয়ামী লীগও। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তিনি বৈঠকও করেছেন একদফা। তবে সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে এখনও।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম তারেক প্রমুখ।