বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ে হাইকোর্ট এমন একটি আদেশ দিয়েছে যাতে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নেতৃত্ব ছাড়তে হতে পারে।
গঠনতন্ত্রের সাত ধারা বাতিল করে বিএনপি সংশোধিত যে গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে, সেটি গ্রহণ করতে নিষেধ করেছে উচ্চ আদালত। এই ধারা অনুযায়ী আদালতে দণ্ডিত কারও দলের সদস্যপদ থাকার যোগ্যতা থাকবে না।
বুধবার দুপুরে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মাদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
বিএনপির সর্বশেষ কেন্ত্রীয় কাউন্সিলে আনা ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে মোজাম্মেল হোসেন নামের বিএনপির ঢাকার কাফরুলের কর্মী সংক্ষুব্ধ হয়ে নির্বাচন কমিশনে একটি আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদন এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছে হাই কোর্ট। আর ওই আবেদনের নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি দণ্ডিতরা পদে থাকতে পারবেন না— বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনীতে বাদ দেয়া বিধান কেন বেআইনি ও সংবিধানের ৬৬ (ঘ)-এর পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবকে একমাসের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার আগে আগে গঠনতন্ত্রের সাত ধারা বাদ দিয়ে সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।
ক্ষমতাসীন দল সেদিন থেকেই এই সংশোধন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তারা বলছে, খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হতে পারেন বুঝেই এই ধারারটি সংশোধন করেছে বিএনপি। এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয় বিএনপি দুর্নীতিবাজের দল।
অবশ্য বিএনপি দাবি করেছে, এই গঠনতন্ত্র সংশোধনী হঠাৎ করে হয়নি। ২০১৬ সালের মার্চে দলের জাতীয় সম্মেলনেই সেটা অনুমোদন দেয়া হয়। সেটি নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে পরে।
৭ ধারাটি বাতিল না হলে এরই মধ্যে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে এমনকি সদস্য হিসেবে থাকতে পারেন কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারত।
কারণ, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দুই জনই একাধিক মামলায় দণ্ডিত। দুই জনই দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর করে কারাদণ্ড পেয়েছেন। এর বাইরে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন।
৭ নম্বর ধারায়, ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা আছে, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’ তাঁরা হলেন: (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি। (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।
হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশের ফলে গঠনতন্ত্রের ওই সংশোধনী আপাতত কার্যকর থাকছে না। তাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দলীয় নেতৃত্বে রাখা এবং নির্বাচনে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগও আটকে যাচ্ছে।
আদেশের পর মাসুদ রুমি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিটকারী মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, এই (সংশোধিত) গঠনতন্ত্র গ্রহণ করা হলে বিএনপিতে দুনীর্তিবাজ, অযোগ্য ব্যক্তিরা নেতা হওয়ার সুযোগ পাবেন। আদালত তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে রুল ও অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন।
রমি জানান, দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের দলীয় কমিটিতে না রাখার যে বিধান বিএনপির গঠনতন্ত্রে ছিল, সংশোধনীতে তা বাদ দেওয়া কেন বেআইনি হবে না এবং সংবিধানের ৬৬ (২) ঘ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি হবে না- রুলে তা জানতে চেয়েছে আদালত।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অবশ্য গঠনতন্ত্রের এই ধারাটি বাতিল করে নির্বাচন কমিশনে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেয়ার আগেই দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড হয়েছে তারেক রহমানের। ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিদেশে অর্থপাচার মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে উচ্চ আদালত। বিদেশে অবস্থান করায় বিএনপি নেতা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি। আর গত ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, সে মামলাতেও তারেক আগেই ১০ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন।