তফসিল ঘোষণা নিয়ে ইসিতে আবারও মতবিরোধ

ec vobon

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পাঁচ কমিশনারের মধ্যে আবারও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এ মতবিরোধ সৃষ্টি করেছেন সেই মাহবুব তালুকদার। এর আগে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়ে কমিশন বৈঠক ছেড়ে উঠে গিয়েছিলেন তিনি।

এবার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিরোধিতা করছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

সূত্র জানায়, শুক্রবার (২ নভেম্বর) ছুটির দিন হলেও সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন নির্বাচন কমিশনাররা। বৈঠকে চার কমিশনার নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট করতে চাইলেও কমিশনার মাহবুব তালুকদার ভিন্নমত দেন।

তিনি তফসিলের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পক্ষে মত দেন। সে ক্ষেত্রে ভোট জানুয়ারিতে গেলেও আপত্তি থাকবে না বলে মত দেন তিনি। কমিশনারদের বৈঠক সূত্র এ তথ্য জানা গেছে।

ইসি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে শুক্রবার বিকেলে পাঁচ কমিশনার ও ইসি সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার রুমে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

সূত্র আরও জানায়, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ইসি প্রস্তুত রয়েছে। তফসিলের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দেবেন সেটিও প্রস্তুত করা হচ্ছে। যে কোনো দিন এ তফসিল ঘোষণা করতে পারবে ইসি। কিন্তু সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশনার হওয়া মাহবুব তালুকদার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ করে তফসিল ঘোষণার পক্ষে মত দেন। এক পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষ না করেই চলে যান তিনি।

জানা যায়, শনিবার (৩ নভেম্বর) নির্বাচনের তফসিল নিয়ে বৈঠক করবে কমিশন। বিকেল ৩টায় এ বৈঠক হবে। এ বৈঠক থেকেও মাহবুব তালুকদার বেরিয়ে যেতে পারেন। তফসিলের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার সংলাপের প্রস্তাব করতে পারেন তিনি।

গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের পাঁচ সদস্য শপথ নেয়ার পর থেকে কমিশনের মতবিরোধ দেখা দেয়। তবে এটি মূলত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে অন্য কমিশনারদের। জুলাইয়ে ইসি সচিবালয়ের ৩৩ কর্মকর্তার বদলি নিয়ে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। এরপর জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়া নিয়েও মতবিরোধ হয়।

এর আগে, গত ৩০ আগস্ট ইসির ৩৫তম কমিশন সভায় নোট অব ডিসেন্ট দেন তিনি। ওই সভায় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনা হয়। সেই সংশোধনীর বিরোধিতা করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে সভা বর্জন করেন মাহবুব তালুকদার।

এ ছাড়া ১৫ অক্টোবর কমিশন বৈঠকে আবার নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন তিনি। পরে প্রেস বিফ্রিং তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে তার নিজস্ব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে না দেয়ায় অপমানিত বোধ করেছেন। এজন্য নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বৈঠকে থেকে তিনি রেব হয়ে যান।

তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশীদারমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রস্তাবনা শিরোনাম আকারে আমি যা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম, নির্বাচন কমিশন সভায় তা উপস্থাপন করতে দেয়া হয়নি।’

এর আগে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষে ভোটগ্রহণ করা হতে পারে। তবে সে বিষয়ে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, ইসি সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে সে ক্ষেত্রে দ্রুত ভোট করা ভালো হবে। কোনো কারণে নির্বাচন জানুয়ারিতে পিছিয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী গেজেট প্রকাশসহ বিভিন্ন বিষয়ে অতিরিক্ত চাপ থাকবে। এ কারণে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট করতে চায় কমিশন।

সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর থেকে নির্বাচনকালীন সময়ের ক্ষণ-গণনা শুরু হয়েছে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন। এজন্য ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি জানিয়েছে ইসি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সূত্র: জাগো নিউজ