কপোতাক্ষ নদের উপর একটি ব্রিজের অভাবে ৫০ হাজার মানুষের দূর্ভোগ

যশোরের কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী বাজারে কপোতাক্ষ নদের উপর ১ টি ব্রিজের অভাবে ২০ গ্রামের মানুষকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন হাজারও যাত্রী, শত শত শিক্ষার্থীকে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাকো পারাপার হতে গিয়ে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়ছে। এখানে ১টি ব্রিজ নির্মাণের দাবী গ্রামবাসীদের দীর্ঘদিনের। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ ব্রিজটি নির্মানের জন্যে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বহু আবেদন-নিবেদনও করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া গেছে। কিন্তু আজো তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এ পথে যাতায়াতকারী ২০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে ত্রিমোহিনী বাজারের পাশের কপোতাক্ষ নদের ওপর মাত্র আধা কিলোমিটার একটি ব্রিজের অভাবে হাজার হাজার মানুষ দূর্ভোগে রয়েছে। কেশবপুরের ত্রিমোহিনী এলাকার মানুষকে বিভিন্ন প্রয়োজনে সাতক্ষীরার কলারোয়া অঞ্চলে এবং সাতক্ষীরার মানুষকে এ অঞ্চলে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু একটি মাত্র সেতুর অভাবে এক কিলোমিটার পথ যেতে এসব মানুষকে ঘুরতে হয় প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ। যা ভূক্তভোগীদের জন্য যেমন বিড়াম্বনার তেমনি সময়ও নষ্ট হয়। নদ তীরবর্তী দেয়াড়া, কাশিয়াডাঙ্গা, চালনদিয়া, দৌলতপুর, ছলিমপুর, পাটুলিয়া, গড়গড়িয়া, বাজে খোরদো, মাঠপাড়া, উলুডাঙ্গা, উলুশী, জানখা, আবাদপাড়া, পাকুড়িয়া, খোরদো, বাটরাসহ ২০ গ্রামে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। সেখানে যোগাযোগের তেমন কোন উন্নয়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রের অনেক জরুরী সুযোগ-সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে ওইসব গ্রামের মানুষ। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই আধুনিকতার যুগে এসে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হলেও কপোতাক্ষ নদের ওপর দিয়ে পারাপারের জন্য আজও কোন ব্রিজ নির্মান হয়নি। যার কারণে কপোতাক্ষ নদের ওপারের দেয়াড়া যাওয়াসহ তীরবর্তী এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। ওই গ্রাম গুলোতে সবচেয়ে বেশি ইরি ধান উৎপাদন হয়। যানবাহন চলাচলের উপযোগী সরাসরি কোনো পথ না থাকায় স্থানীয় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধানসহ কৃষি পণ্যসামগ্রী সহজভাবে বাজারজাত করতে না পারায় নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই মহাজনদের কাছে চলমান বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে কৃষি পণ্য বিক্রি করতে হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দাবি থাকলেও কারো যেন মাথা ব্যথা নেই।

ত্রিমোহিনী পোস্ট-ই সেন্টারের উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম ও সাকোর পাশের দোকানদার স্বপন দত্ত জানান, প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির অনেক দূর, আর সে কথা বিবেচনা করে ঘাটের টোল তোলা বন্ধ করে কপোতাক্ষ নদ তীরবর্তী এলাকার দু‘পারের মানুষ নিজেরা চাঁদা দিয়ে বাঁশ ক্রয় করে নির্মাণ করেছেন বাঁশের সাঁকো।

এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিনই আত্মীয়র বাড়ি যাওয়া, নিজেদের প্রয়োজনে কেশবপুর থেকে আসা পথচারী, ভ্যান, মোটরসাইকেল এবং ওপারের দেয়াড়া, খোরদো, বাটরা, পাকুড়িয়া, বামনখালিসহ ২০ গ্রামের হাজারও যাত্রী সাধারণ যাতায়াত করে থাকেন। ব্রিজ না থাকায় বাইসাইকেল, ভ্যান ও মোটরসাইকেলই তাদের একমাত্র বাহন। কিন্তু অর্থাভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাঁশের সাকোটি মেরামত না করায় তা ভেঙ্গেচুরে নষ্ট হয়ে গেছে। এর ওপর দিয়ে ঝুকি নিয়ে ওপারের শত শত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীকে এপারের ত্রিমোহিনী বাজারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে আসতে হয়। এছাড়া ভারতে যেতেও ওই সাকোটি ব্যবহার করতে হয় মানুষকে।

ত্রিমোহিনী বাজারের ব্যবসায়ি রবিউল ইসলাম রবি বলেন, কপোতাক্ষ নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের হলেও সে দাবি বাস্তবায়নে কারো মাথা ব্যথা নেই। মাত্র আধা কিলোমিটার ব্রিজ নির্মিত হলে মানুষকে ২০ কিলোমিটার দুরত্ব অতিক্রম করতে হতো না। এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতো। প্রতিবারের মতো এবারও উভয় পারের মানুষ অধির আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের আশ্বাসের দিকে। কবে হবে সেতুটি নির্মাণ ?

এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা প্রকৌশলী মুনছুর রহমান বলেন, ওই স্থানে ব্রিজটি নির্মান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তারপরও কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে ব্রিজটি নির্মাণ হবে।