যশোরের চারটি আসন থেকে জামায়াতের চার নেতা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ

যশোরের চারটি আসন থেকে জামায়াতের চার নেতা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছে। জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। মনোয়নহপত্র সংগ্রহকারী নেতারা হলেন, যশোর-১ (শার্শা) আসন থেকে জামায়াতের সাবেক জেলা আমির কেন্দ্রীয় নেতা মাওলালনা আজিজুর হরমান, যশোর-২ (ঝিকরাগাছা ও চৌগাছা) আসন থেকে সাবেক এমপি মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাৎ হুসাইন, যশোর-৫ (মনিরামপুর) থেকে আইনজীবী, লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী এনামুল হক এবং যশোর-৬ ( কেশবপুর) আসন থেকে লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মোঃ মোক্তার আলী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। অতীতে যশোর-১, যশোর-২ ও যশোর-৬ আসন থেকে জামায়াতের এমপি নির্বাচিত হয়েছে।

যশোর-১ মাওলানা আজীজুর রহমান
জামায়াতের যশোর জেলার সাবেক আমীর ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আজীজুর রহমানের পক্ষে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যশোর-১ শার্শা আসনে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছ হতে গত ১২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। তার পক্ষ হতে নমিনেশনপত্র সংগ্রহ করেন জামায়াত নেতা রেজাউল করিম, অধ্যাপক হাসানুজ্জামান ও জয়নুল আবেদীন।
মাওলানা আজীজূর রহমান ২০০৮ সালে এই আসনে নির্বাচনে অংশ নেন। আওয়ামী লীগ প্রাথী শেখ আফিল উদ্দিনের কাছে সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটে পরাজিত হন।

যশোর-২ অধ্যক্ষ মুহাদ্দিস আবু সাঈদ
জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাৎ হুসাইনের যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসন থেকে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে তিনি এই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

আধ্যক্ষ আবু সাঈদ ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে ১ম স্থান অধিকার করে কামিল পাশ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি জামায়াতের রুকন পদ লাভ করেন। ১৯৯০ সালে শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে চার দলীয় জোট থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবু সাঈদ।
২০০৯ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চার দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের নিকট পরাজিত হন।

যশোর-৫ এ্যাডঃ গাজী এনামুল হক
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এ্যাডঃ গাজী এনামুল হক। ১৯৫৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মনিরামপুর থানার ১ নং রোহিতা ইউনিয়ন পট্রি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে নাম লেখানোর মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে সরব উপস্থিতি ছিল গাজী এনামুল হকের যা চোখে পড়ার মত। এরপর ১৯৭১ সালে দেশব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন গাজী এনামুল হক। পরবর্তী সময়ে জাসদ গঠিত হলে জাসদের রাজনীতিতে নিজের নাম লেখান এবং আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে মেজর জলিলের ডাকে সাড়া দিয়ে সর্ব কণিষ্ঠ সদস্য হিসাবে গণবাহিনীতে ঝাঁপিয়ে। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন শাস্ত্রে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে ১৯৯১ সালে যশোর জজ কোর্ট এবং ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসাবে যোগদান করেন।
২০০১ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে কেশবপুর আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিগত উপজেলা নির্বাচনে মনিরামপুর থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দীতায় পরাজয় বরণ করেন। তিনি বাংলা একাডেমীর সদস্য, কোরআন স্ট্যাডি ফোরামের পরিচালক, যশোর সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, যশোর অপরাধ সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির আজীবন সদস্য, ডাঃ মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সহিত সক্রিয়ভাবে জড়িত। তার লেখা সাহিত্যের উপরে ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

যশোর-৬ অধ্যাপক মোক্তার আলী
জামায়াত নেতা অধ্যাপক মোঃ মোক্তার আলী যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন থেকে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে তিনি এই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
শিক্ষা, পেশা ও সামাজিকভাবে বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী অধ্যাপক মোক্তার আলী ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি কেশবপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর ও জেলা মজলিসের শুরার সদস্য। ১৯৮১ সালে ইংরেজীতে মাষ্টার্স পরীক্ষায় ২য় শ্রেণীতে ১মস্থান অধিকার করেন তিনি। ১৯৮৪ সালে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েও সেখানে যোগদান না করে ১৯৮৩ সালে একটি কলেজে ইংরেজি শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ ২৮ বৎসরের শিক্ষাজীবনে অসংখ্য গুণধর ছাত্র কর্মকর্তা তৈরির পর ২৮ বছর পর ২০১৭ সালে তিনি কেশবপুর কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী হিসাবে অধ্যাপক মোক্তার আলী অংশগ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে স্থগিত হওয়া নির্বাচনে তিনি চারদলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যের উপর তার রচিত বই সংখ্যা ২০ টির অধিক। তার ৩টি কাব্যগ্রন্থ ও ১০টি ইসলামী বই প্রকাশের পথে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেন জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন।