আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম

A. Lig Logo

দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। আপাতত তিনশ’ আসনেই দলীয় প্রার্থীদের তালিকা করে রাখা হয়েছে। প্রকাশ করা হতে পারে আগামী সপ্তাহে। আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গী ১৪ দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি এবং যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার আলোচনা চলছে। তাদের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয় চূড়ান্ত হওয়ার পর তিনশ’ আসনে দল এবং জোটের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের বর্তমান এমপি মন্ত্রীদের অনেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে আলোচনা ছিল অনেক দিন ধরে। দলের নেতারাও এমন আভাস দিচ্ছিলেন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে এবার মনোনয়নে বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে না বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র বলছে, শুধুমাত্র কিছু তারকা প্রার্থীকে জায়গা করে দিতে এবং বিতর্কিতদের জায়গায় নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যরাই আবারো দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্ভাব্য কোন্দল ও বিশৃঙ্খলা এড়ানো এবং প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমান এমপিরাই বেশি সুবিধা পাবেন বলে দলীয় হাইকমান্ড মনে করে। এ ছাড়া বর্তমান এমপিদের বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী দিলে এমপিরা নির্বাচনে কী ভূমিকায় থাকবেন সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে। দলীয় সূত্র জানায়, জোটের জন্য ৬৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭০টি আসন ছাড়া হতে পারে। এ আসনগুলোতে শরিক দলের প্রার্থীদের জন্য কিছু এমপি ও প্রভাবশালী নেতাও মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৪৮ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য দলীয় মনোনয়ন পাননি। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জনবিচ্ছিন্ন কেউ ফের মনোনয়ন পাবেন না। তবে এবার এই সংখ্যা আরো কম হতে পারে। এ সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ এ দাঁড়াতে পারে। দলীয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত বাদ পড়ছেন এমন আলোচনা আছে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বি এম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর নাম। এ ছাড়া ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা মনোনয়ন পাচ্ছেন, এটাও প্রায় নিশ্চিত। তিনি নড়াইল-২ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ আসনের বর্তমান এমপি মনোনয়ন পাচ্ছেন না। মাদারীপুর-৩ আসনে দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. আবদুস সোবহান গোলাপের মনোনয়ন পাচ্ছেন এ আলোচনা আছে।

এমনটি হলে এ আসনের বর্তমান এমপি দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। মাগুরা-২ আসনে এ টি এম আবদুল ওহাবের বদলে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সাইফুজ্জামান শিখরের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। সিলেট-৬ আসনের বর্তমান এমপি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে স্থান ছেড়ে দিতে হতে পারে যুক্তফ্রন্ট নেতা শমসের মবিন চৌধুরীকে। এদিকে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন নিয়ে নানামুখী আলোচনা রয়েছে দলে। কে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে কৌতূহল সর্বত্র। জোট মহাজোট আর নির্বাচনী কৌশলের কারণে কে বাদ পড়ছেন আর কে যুক্ত হচ্ছেন এমন জিজ্ঞাসা মুখে মুখে। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এলাকা ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা কেন্দ্রীয় নেতা ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের কাছে নানাভাবে লবিং তদবির করছেন নিজের মনোনয়নের জন্য।

বদির বদলে স্ত্রী, রানার বদলে বাবা: কক্সবাজারের আলোচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও টাঙ্গাইলের এমপি আমানুর রহমান খান রানা এবার দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না। গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যদিও ওই দুই আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বাদ পড়া দুই এমপির পরিবার থেকেই। বদির আসনে (কক্সবাজার-৪, টেকনাফ-উখিয়া) তার স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী এবং রানার আসনে (টাঙ্গাইল-৩, ঘাটাইল) তার বাবা আতাউর রহমান খান। মঙ্গলবার সচিবালয়ে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এসব তথ্য জানান। বর্তমান এমপি-মন্ত্রীদের কারও কারও মনোনয়নের তালিকা থেকে বাদ পড়ার যে খবর সংবাদমাধ্যমে আসছে, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, কোন মন্ত্রী খারাপ আমাকে বলুন। কীভাবে মেজার করবো? বেইজটা কী যে ওমুক খারাপ লোক? তারপরও যাদের নিয়ে বিতর্ক আছে, দুটি সিটের কথা বলতে পারি, একটি হচ্ছে উখিয়া-টেকনাফ, সেখানে বদিকে ড্রপ করে তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দিচ্ছে, যদিও আমরা এখনো ঘোষণা করিনি।

বিতর্কের কারণে বদিকে বাদ দিলেও তার ঘরেই কেন মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ঘরে কি সবাই অপরাধী? আপনি অপরাধী হলে কি পরিবারের সব খারাপ লোক? বদি সম্পর্কে যে কন্ট্রোভার্সি আছে, তার কোনো প্রমাণ আছে? তবু কন্ট্রোভার্সি থাকায় অলটারনেটিভ বেছে নিয়েছি। বদির পাশাপাশি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের এমপি রানাকেও বাদ দেয়া হচ্ছে। একটি মার্ডারের অভিযোগে রানা জেলে আছে, সার্ভে রিপোর্টে রানা ও বদি অনেক ব্যবধানে এগিয়ে আছে। রানার বাবা জেলা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান খান মনোনয়ন পাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেউ এবার মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ছেন কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, পড়তে পারে, এ মুহূর্তে বলবো না। চমক বলবো না, নানা কারণে বাদ পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রক্রিয়া কবে শেষ হচ্ছে- এ প্রশ্নে কাদের বলেন, আমাদের দলীয় মনোনয়ন আপাতত শেষ করেছি, এখন জোটের শরিকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি শেয়ারিং এর বিষয় নিয়ে।

২৪ বা ২৫শে নভেম্বর প্রকাশ করা হবে। শরিকদের ৬৫ থেকে ৭০টি আসন দেয়া হতে পারে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শরিকদের কাছে উইনেবলদের তালিকা চাওয়া হয়েছে, আমাদের যারা প্রতিপক্ষ, তাদের সঙ্গে সাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ভাবার কারণ নেই, এজন্য শক্তিশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থী দিতে হবে, এটা আওয়ামী লীগ হোক, আর শরিকদের হোক। মহাজোটের কেউ কেউ ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে যে গুঞ্জন রয়েছে, তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোনো সিদ্ধান্তে এসেছে কিনা-এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ওখান থেকে এখানে, এখান থেকে ওখানে- এটা বাংলাদেশে আছে। এইচ এম এরশাদ মহাজোটে থাকার ঘোষণা দিলেও শেষ সময়ে তার মত বদলানোর কোনো সম্ভাবনা আছে কি না- এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করতে যাচ্ছি, কোনো ফাঁকফোকর নেই, এরশাদ সাহেবের অধিকার আছে, যদি অন্য কোথাও চলে যান বাধা দিতে পারবেন? মহাজোটের সমঝোতায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে বলে মনে করি না।

ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রসঙ্গক্রমে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। তারা আশাবাদী, বাংলাদেশে একটি ভালো নির্বাচন হবে। এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, স্থিতির জন্য এ সরকার কনটিনিউ করবে, এ কথা ইন্ডিয়া কেন বলবে! ভারত কি পারবে আমাদের জেতাতে? জনগণ যদি ভোট না দেয়, সেটা কি আমরা আশা করবো? এটা তো আমাদের দেশ। এটা তো ইমপসিবল, আর এ ধরনের চিন্তা আপনি কেন করেন? সূত্র: মানবজমিন