যশোর রেলওয়ে জাংশন। সকাল পৌনে ৮টা। প্লাটফর্মে দাড়িয়ে আছে খুলনা হতে রাজশাহীগামী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস। ট্রেনটি স্টেশনে পৌছাতেই ঝালমুড়ি, ছোলা, সিদ্ধ ডিম, কলা, এনার্জি ড্রিংক ইত্যাদি নিয়ে ছুটোছুটি শুরু করে দিল হকাররা। কিন্তু আগের মতো ভ্রাম্যমান বই বিক্রেতাদের দেখা মিললো না। একসময় এসব হকারদের মতোই রেলস্টেশনসহ শহরের বাস টার্মিনালগুলোতে দেখা যেত কাধে একটি ঝোলা ও একহাতে নানা বই নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ভ্রাম্যমান বই বিক্রেতাদের। কিন্তু এখন আর সেইসব ভ্রাম্যমান বই বিক্রেতাদের পাওয়া যায় না।
খোজ নিয়ে জানা যায়, যশোর থেকে ধীরে ধীরে ভ্রাম্যমান বই বিক্রেতাদের বিদায় ঘটেছে। একসময় যশোরের রেল স্টেশন, মনিহার ও কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনালে দেখা মিলতো তাদের। সামান্য লাভে যাত্রীদের হাতে তুলে দিত তারা জ্ঞানের বাহন বইকে। কিন্তু অধিক কষ্ট, স্বল্প লাভ ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে তাদের সংখ্যা কমতে থাকে। সর্বশেষ যশোরের রেলস্টেশনে কিছু ভ্রাম্যমান বই বিক্রেতাদের পাওয়া যেত। কিন্তু এখন তারাও হারিয়ে গেছে। কথা হচ্ছিল যশোর রেলওয়ে জাংশন সংলগ্ন একটি লাইব্রেরি “স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স” এর বই বিক্রেতা মামুনের সাথে। সে জানায় কিছুদিন আগেও তারা এখানে বই বিক্রি করতো। কিন্তু মোবাইল ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে মানুষ দূর পাল্লার ভ্রমনে আগের মতো এখন আর বই পড়ে না। এখন সবাই মোবাইলে ফেসবুক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এজন্য ভ্রাম্যমান বই বিক্রেতাদের কদর কমে গেছে। বাধ্য হয়ে তারা এখন অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছে।
ফুটপাতে অনেক হকার আছে। কিন্তু বই বিক্রি সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন কাজ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটা হাতের ওপর বই নিয়ে ঘুরতে হয়। সেই সঙ্গে পিঠে একটা বইয়ের ঝোলা তো থাকেই। কিন্তু বই বিক্রি কমে যাওয়ায় ও মেহনত অনুযায়ী ন্যায্যমূল্য হতে বঞ্চিত হওয়ায় জীবন চালাতে তারা আজ অন্য পেশাকে সঙ্গী করে নিয়েছে।
রাজশাহী অভিমুখে তরিকুল নামের এক যাত্রীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, সত্যি বলতে কি বই পড়ার অভ্যাসটা আমাদের কমে গেছে। আমরা যারা যুবক তাদের কাছে একটা স্মার্ট ফোন থাকলে আর কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। দূরজার্নিতে নিশ্চিন্ত মনে ফেসবুক চালানো বা গেম খেলে সময় পার করা যায়। আর যদি বই পড়তেই হয় তবে মোবাইলেই সফটকপিতে পড়া যায়। এজন্য দাম দিয়ে বই কেনা ও বই বহন করার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না। সম্ভবত এসব কারণেই ভ্রাম্যমমান বই বিক্রেতাদের আর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।