রাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টাকা ও ৫টি স্মার্ট ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

ru logo

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ছয় শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মানিব্যাগে থাকা টাকা ও অর্ধ লক্ষাধিক টাকা সমমূল্যের পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ২৩৩ নম্বর কক্ষ এ ঘটনা ঘটে।
তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের জুয়া খেলা অবস্থায় আটক করা হয়। এবং তাদের কাছ থেকে যা নেওয়া হয়েছিলো সবই ফেরৎ দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা হলেন, দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের রবিউল ইসলাম, গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন, ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের উজ্জল হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইশতিয়াক আহমেদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মাহফুজুর রহমান, গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মো. রাশেদ। তাদেরকে রাতেই থানায় নেওয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলামের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
অপরদিকে অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চঞ্চল কুমার অর্ক এবং মাদার বখশ হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী শুভ্র দেব।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়. উজ্জল হোসেন অন্যদের সঙ্গে নিয়ে তার বন্ধু মেহেদির কক্ষে (২৩৩) টাকা দিয়ে কার্ড (তাস) খেলছিলেন। ওই কক্ষে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন রবিউল ইসলাম। এ সময় রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাদীদ মুনতাসির এলাহী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন, মেহেদি হাসান সজল, সাংগঠনিক সম্পাদক অর্ক, ছাত্রলীগ কর্মী শুভ্রসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ওই কক্ষে এসে কক্ষটি ভেতর থেকে আটকে দেয়। এ সময় কার্ড খেলার অপরাধে প্রত্যেককে চড়-থাপ্পড় ও লোহার রড মারধর করে। পরে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড, চারটি অ্যানালগ ফোন এবং মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় অর্ক ও শুভ্র।
পরে হল ভুক্তভোগীদের হল প্রভোস্টের রুমে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের ফোন ও মানিব্যাগ ফিরিয়ে দিতে বললে অর্ক শুধুমাত্র চারটি নরমাল ফোন ও মানিব্যাগ ফিরিয়ে দেন। তবে তাদের মানিব্যাগ চেক করলে তার ভিতরে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীদের দাবি- প্রত্যেকের মানিব্যাগেই পাঁচ-সাত শো করে টাকা ছিলো। কিন্তু তাদেরকে টাকাশূন্য মানিব্যাগ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী মাদার বখ্শ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রবিউল বলেন, ‘ আমি ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী নাইমে’র ল্যাপটপ থেকে হল সমাপনির (২০১৩-১৪ ব্যাচ) ছবি নিচ্ছিলাম। আর অন্যরা কার্ড খেলছিল। হটাৎ ছাত্রলীগের ছেলেপেলে এসে আমার মানিব্যাগ ও একটি নরমাল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে নেয়। মানিব্যাগে প্রায় পাঁচশত টাকা এবং আমার ভাইয়ের দেওয়া বিদেশি কিছু ডলার ছিলো। তবে আমার ফোন ফিরিয়ে দিলেও ও মানিব্যাগ ফিরিয়ে দেওয়ার সময় তাতে থাকা টাকা ও ডলার সেখানে ছিল না।’
তবে অভিযুক্ত অর্ক দাবি করে বলেনম ‘হলে জুয়া খেলা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমরা তাদেরকে আটক করে প্রভোস্টকে খবর দেই। তাদেরকে দুয়েকটি চড়-থাপ্পড় দিয়েছি। তাদের কাছ থেকে আমিই ফোন ও মানিব্যাগ নিয়েছিলাম। তবে প্রোভোস্টের রুমে সেগুলো ফিরিয়ে দিয়েছি।’
ভুক্তভোগী রাশেদ ও মাহফুজ বলেন, আমাদের কাছ থেকে শুভ্র ফোন ও মানিব্যাগ নিয়েছিলো। তবে ফাঁকা মানিব্যাগ ফিরিয়ে দিলেও ফোন ফেরত দেয়নি।
এসময় আরেক অভিযুক্ত শুভ্র দেবকে ফোন ও মানিব্যাগ নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে প্রথমে স্বীকার করলেও চঞ্চল কুমারের বক্তব্যের পর তিনি তা অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল আলিম বলেন, ‘ অর্ক আমাকে বিষয়টি জানানো পর আমি হলে গিয়েছি। আটককৃতদের মধ্যে আমার হলের দুজন ছিলো। ওই দু’জনকে জুয়া খেলার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আমরাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। এবং বাকিদের বিষয়টি প্রক্টর দেখবেন। ফোন ও মানিব্যাগের বিষয়টি নিয়েও ছাত্রলীগের সঙ্গে কথা বলবো।’
রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জুয়া খেলা অবস্থায় কয়েকজনকে আটক করে হল প্রভোস্টের হাতে তুলে দিয়েছে। তবে ফোন নেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। এ বিষয়ে আমি নেতাকর্মী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলবো।’
মতিহার থানার ওসি (তদন্ত) মাহবুব আলম বলেন, ‘বুধবার রাতে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে থানায় এনেছিলো। আজ (বুধবার) সকালে সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলামের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছি।