সংবিধানের ৪ মূলনীতিতে দাঁড়িয়ে আছে রাবির শহীদ মিনার

হাসান মাহমুদ, রাবি: ‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কী বন্ধু, আমরা এখনও চার কোটি পরিবার…’ কবি আলাউদ্দিন আল আজাদের এই কবিতার সাড়ে চার কোটি এখন চারগুণ ছাড়িয়েছে। তবুও এই কবিতা স্মরণ করিয়ে দেয় পিচঢালা রাজপথে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া মুখগুলো, স্মরণে শুরু থেকে কোনও শহীদ মিনার দাঁড় করাতে দেয়নি শাসকরা। বার বার ভাঙা-গড়ার খেলায় শেষ পর্যন্ত স্থান করে নিয়েছে সেই স্মৃতির শহীদ মিনার।

আবার যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে মানুষ নির্মাণ করে স্মৃতিস্তম্ভ। এর মাধ্যমে ইতিহাসকে হৃদয়ে ধারণ করা অনেক সহজ হয়, সরল হয়ে যায় অমর ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানোর কঠিন কাজটাও। সেজন্যই ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গ করেছিলেন যারা, তাদের স্মরণে নির্মিত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

আর সে দিক থেকে পিছিয়ে নেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টি ভাষা আন্দোলনের পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবুও এ বিশ্ববিদ্যালয় ভুলে যায়নি সেই ভাষা শহীদদের। বরং শহীদদের স্মৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংবিধানের চারটি মূলনীতিকে ধারণ করে নিজ বুকে স্থান করে নিয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি।

সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের শহীদ মিনারটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে একটি বুকলেট প্রকাশ করেছে। সেই বুকলেট রাবির এই মিনার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

রাবির শহীদ মিনারটি দেশের অন্যান্য শহীদ মিনারের গড়নের থেকে আলাদা। এ শহীদ মিনারের নকশাটি করেছেন স্থপতি খায়রুল এনাম। ১৯৭২ সালের ৯ই মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ শহীদ মিনারের রয়েছে চারটি বাহু ,বাহু চারটি উপরের দিকে বান্ধনী দ্বারা আবদ্ধ। এখানে চারটি বাহু দ্বারা ১৯৭২সালের সংবিধানের চারটি মূলনীতি-জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। এ শহীদ মিনারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হল মূরাল চিত্র, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, উন্মুক্ত মঞ্চ, সুবিস্তৃত খোলা প্রান্তর ও ফুলের বাগান।

শহীদ মিনারটি কৃত্রিমভাবে তৈরি মাটির ঢিলার উপর অবস্থিত। অনেকগুলো সিড়ি বেয়ে উঠতে হয় মিনারের ভিত্তি মূলে।মিনারের পশ্চাতে রয়েছে দীর্ঘ একটি মূরাল চিত্র। “অক্ষয়বট” শীর্ষক মূরালটি নানা বর্ণের পোড়া ইট,পাথর ইত্যাদি নানা অক্ষয়ের মাধ্যমে নির্মান করা হয়েছে। এ চিত্রটিতে রুপ দেওয়া হয়েছে এক ¯েœহময়ী মা ও তার বীর সন্তানদের অবয়ব। এখানে মায়ের অঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি প্রগাড় ভালবাসার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মূরালটি নির্মান করেন শিল্পী মুর্তজা বশীর।

শহীদ মিনারের পাদদেশে পূর্বদিক থেকে যে দিক থেকে উদিত হয় নতুন দিনের সূর্য, সেদিকে রয়েছে একটি শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। এ সংগ্রহশালার ডিজাইন করেন স্থপতি মাহবুবুল হক। সংগ্রহশালার কোল ঘেঁষে রয়েছে ্একটি উন্মুক্ত মঞ্চ । এর পিছনের দেওয়ালে রয়েছে গ্রামবাংলার আবহমান দৃশ্য যা রিলিফ ওয়ার্কে নানা রঙের মাধ্যমে রূপ দেওয় হয়েছে। এটি নির্মাণ করেন শিল্পী ফণীন্দ্রনাথ রায়। এ মঞ্চে মঞ্চস্থ হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যার মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণের ধারা।

সুউচ্চ এ শহীদ মিনার চত্বর বাঙালি মুক্তিসংগ্রাম ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বুকে ধারণ করে আছে।