শার্শায় আ’লীগ নেতা ইবাদ হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি ৪ বছরেও, প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা

হত্যাকান্ডের পর চার বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত শার্শা উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা ব্যবসায়ি ইবাদ হোসেন হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি। পুলিশের দুর্বল চার্জশীটের কারনে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসামিরা দাপটের সাথে প্রকাশ্যে এলাকায ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর উদ্বেগ, উৎকন্ঠ ও শংকার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে মামলার বাদি ও ইবাদের পরিবার।

বেনাপোল পৌর ট্রাকটোল ইজারো নেওয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল রাতে ইবাদ হোসেনকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কামাল ব্রাদার্স থেকে অস্ত্রে ঠেকিয়ে অপহরন করে একটি মাইক্রেবাসে নিয়ে যায় দুধর্ষ সন্ত্রাসীরা। বেনাপোল পাঁচ পুকুর জামতলায় নিয়ে ইবাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। তাকে হাতুড়ি পেটা করা হয়। এরপর মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে বাগআচড়া ক্যাম্পের আইসি মতিয়ার ইবাদ হোসেনকে উদ্ধার করে আড়াই শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। শারীরিক অবস্থার অবন্নতি হলে জেনারেল হাসপাতাল থেকে ইবাদ হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। ঢাকার কেয়ার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২১ এপ্রিল ইবাদ হোসেন মারা যায়।

ইবাদের মৃত্যুর পর ছোট ভাই জাকির হোসেন ২৩ এপ্রিল বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় বেনাপোল পোর্ট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শফিকুল ইসলামকে। কিন্তু তদন্তে কোন অগ্রগতি না হওয়ায় ২৮ এপ্রিল মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি হস্তান্তরের দেড় মাস (৪৫ দিন) পর সুমন নামে এক সন্ত্রাসীকে বেনাপােল কাস্টমস হাউজের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ আটক করে।
আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দিতে সুমন জানায় সে ছাড়াও আরো ৪ জন ইবাদ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। হত্যার পরিকল্পনাকারি হিসেবে আরো ৫ জনের নাম বলে সুমন। কিন্তু তার পরও হত্যার পরিকল্পনাকারিরা প্রকাশ্যে বুক উচিয়ে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এস আই আবুল খায়ের মোল্লা তদন্ত শেষে ২০১৪ সালে ২৪ নভেম্বর ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। অভিযুক্ত আসামিরা হচ্ছে- বেনাপোল ভবের বেড় গ্রামের মৃত ইয়ারআলীর ছেলে সুমন মাহমুদ, বেনাপোল বিজয় গোডাউনের পাশে রহিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া রঞ্জন কুমার দাসের ছেলে মিলন কুমার দাস, বেনাপোল বাহাদুরপর সড়কের আনিছু রহমানের ছেলে অহিদুর রহমান অপু, লেনু মিস্ত্রর ছেলে ড্রাইভার রনি ও দুর্গাপুর গ্রামের মান্নান মিস্ত্রির ছেলে ছোট সুমন। আসামিদের মধ্যে ছোট সুমন পুলিশের হাতে আটক হলেও বাকি ৪ আসামি থেকে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে।

এদিকে হত্যকান্ডের পর চার বছর পার হয়ে পাঁচ বছরে পড়লেও এখনো পর্যন্ত ইবাদ হত্যাকান্ডের কোন বিচার হয়নি। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এক এমপি’র নেপথ্য মদদে ৪ আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় দাপটের সাথে চলাফেরা করছে।

নিহত ইবাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, পুলিশের দুর্বল চার্জশীটের ও স্থানীয় এমপির মদদের কারণে আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে সহজেই জামিনে ছাড়া পেয়েছে। আসামিরা ছাড়া পেয়ে বিভিন্ন সময় মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদি জাকির হোসেন ও নিহত ইবাদের পরিবারকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। বর্তমানে ইবাদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। ইবাদ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের জন্য ইবাদের পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।