বগুড়ায় বিএনপি নেতা হত্যায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়ার নিশিন্দারা উপশহর বাজার এলাকায় রোববার রাতে বিএনপি নেতা পরিবহণ ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকালে নিহতের স্ত্রী আকতারা জাহান শিল্পী সদর থানায় এ মামলা করেন। এজাহারে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এতে বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের দ্বন্দ্বে দায়িত্বশীল এক নেতার নির্দেশে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামীদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, পরিবহণ ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধি।

সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুজ্জামান মিয়া জানান, তদন্তের স্বার্থে এখনই আসামিদের নাম প্রকাশ করা হবে না।

মামলার বাদী বলেছেন, পুলিশ নিষেধ করেছে ও নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি কারো নাম বলবেন না।

পুলিশ ও এলাকাবাসীরা জানান, অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন বগুড়া সদরের ধরমপুর এলাকার আনিসুর রহমান তালুকদারের ছেলে। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি পরিবহন ব্যবসা ও আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি প্রতি রাতে নিশিন্দারা উপশহর বাজারে আড্ডা দিতেন।

রোববার রাত ১০টার আগে অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন তার প্রাইভেট কার নিয়ে উপশহর বাজারে আসেন। বিসমিল্লাহ চাউল আড়ৎ থেকে চাল কেনেন। চালগুলো প্রাইভেট কারে রেখে দোকানিকে জানান, তিনি মোবাইল ফোনে ফ্লাক্সিলোড দিবেন।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুর্বৃত্তরা তার উপর হামলা করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত ও দায়ের কোপ দিয়ে পালিয়ে যায়। সব দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা চলে যান। পথচারীরা তাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সোমবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে শাহীনের লাশ শহরের ধরমপুর স্কুলপাড়ার বাড়িতে নেয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের দ্বন্দ্ব ও নেতাদের দায়ী করেন। বিকাল ৪টায় জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরে নবাববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের কাছে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে ৪ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বাদ আসর ধরমপুর খেলার মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে শাহীনের লাশ দাফন করা হয়েছে।

এছাড়া অ্যাডভোকেটস্ বার সমিতি থেকে দলমত নির্বিশেষে আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও ফুলকোর্ট রেফারেন্স পালন করেন। আইনজীবীরা অ্যাডভোকেট শাহীনের খুনিদের আইনি সহায়তা না দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

বগুড়া সদর পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুজ্জামান মিয়া জানান, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নিহত বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীনের স্ত্রী আকতারা জাহান শিল্পী ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তা তদন্তের স্বার্থে ও বাদী নিরাপত্তার স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ করতের রাজি হননি।

তিনি জানান, এজাহারে মোটর মালিক গ্রুপের কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা বলা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফুলবাড়ি ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আম্বার হোসেন জানান, ন্যায় সঙ্গত তদন্ত হবে।

এর আগে সদ্য পদোন্নতি পাওয়া পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডলের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের তদন্ত সহায়ক টিম গঠন করা হয়েছে।

বিএনপির শোকর‌্যালি:

বগুড়া সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পরিবহণ ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীনের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জেলা বিএনপির ৪ দিনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শহরে নবাববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোকর‌্যালি বের করা হয়।

র‌্যালি শেষে প্রতিবাদ সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বিচার দাবি করে বলেন, শাহীন হত্যার প্রতিটি রক্ত ফোঁটার বদলা নেয়া হবে।

অন্যান্যের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, আলী আজগর হেনা, ফজলুল বারী বেলাল, লাভলী রহমান, এমআর ইসলাম স্বাধীন, তাহাউদ্দীন নাহিন, নাজমুল হুদা পপন, পরিমল চন্দ্র, খায়রুল বাশার, সিপার আল বখতিয়ার, আব্দুল বাছেদ, খাদেমুল ইসলাম, মাসুদ রানা, শাহাবুল আলম পিপলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরিবহণ মালিক শ্রমিক যৌথ পরিষদের প্রতিবাদ সভা

বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও পরিবহণ ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকালে শহরতলির চারমাথায় পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি শাহ আকতারুজ্জামান ডিউকের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি আবদুল লতিফ মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী, কার্যকরি সভাপতি রফিকুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা কামরুল মোরশেদ আপেল, আন্ত:জেলা ট্রাক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান, মোশাররফ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা প্রশাসনের কাছে প্রকৃত খুনীদের গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। এ ঘটনায় নিরাপরাধ কাউকে হয়রানি না করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।