এ মামলায় রেকর্ড না দেখে বেইল দিচ্ছি না : বিচারপতি

khalada zia
ফাইল ছবি

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আদালত বলেছেন, ‘সাত বছরের সাজার মামলায় আমরা জামিন দিই না, তা না। যেহেতু অন্য একটি মামলায় (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়) হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই মামলায় জামিন না হলে তিনি মুক্তি পাবেন না। ফলে বিষয়টি এ মুহূর্তে জরুরি দেখছি না।’

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে এ মামলার শুনানিকালে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানিকালে আদালত এসব মন্তব্য করেন।

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল বলেন, ‘মাই লর্ড, আবেদনটি একটু শোনেন, না শুনলে আমরা হতাশ হব।’

তখন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘না, শুনতে পারব না। শুনলে আদেশ দিতে হবে। আগে নথি আসুক, তখন জামিনের আবেদনটি দেখব। এ মামলায় রেকর্ড না দেখে বেইল দিচ্ছি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ মামলায় আর্জেন্সি নাই। যেহেতু অপর মামলায় উনার (খালেদা জিয়ার) সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। সেটাতে তো জামিনে নেই।’

এ সময় জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘মাই লর্ড, উনি এ দেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। উনি খুবই অসুস্থ। শারীরিক সমস্যার কারণে চলাফেরা করতে পারছেন না।’

এ সময় খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতকে বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত জামিন শুনানি করেন।’

তখন আদালত বলেন, ‘আমরা নথি না দেখে শুনানি করতে পারব না। আগে নথি আসুক।’

জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আপনি একটি সময় নির্ধারণ করে দেন। তা না হলে সরকারপক্ষ এখানে ইন্টারফেয়ার করবে। দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন কমিশন। এখানে সরকারপক্ষ কোনো পক্ষ নয়। কিন্তু অ্যার্টর্নি জেনারেল এসে বসে আছেন।’

এ সময় আদালতে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।

এ সময় অ্যার্টর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে সকল মামলায় হাজির হই; এতে দোষের কিছু না। তা ছাড়া আমরা এ মামলার অংশীদার।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘আপনারা এভাবে বলবেন না। অ্যাটর্নি জেনারেল আসতেই পারে।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘এ মামলার নথি আসুক, তার পর জামিনের বিষয়টি দেখব। আমরা তিন মাস সময় দিয়ে দিচ্ছি। নথি পাঠানোর জন্য।’

জবাবে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘দুই সপ্তাহ সময় দেন। এর মধ্যে জামিনের শুনানির ব্যবস্থা করেন। অন্যথায় আমরা অন্য কোর্টে যাব।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘আমি আবেদনটি ফেরত দিয়ে দিচ্ছি।’

তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত, আপনার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে।’

তখন আদালত এ মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। এ ছাড়া এ মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ডও স্থগিত করার আদেশ দেন।

একই সঙ্গে নিম্ন আদালত থেকে এ মামলার নথি তলব করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে মামলার নথি দাখিল করতে হবে।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ সময় আদালতে খালেদার পক্ষে আরো ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরোদ্দোজা বাদল, আমিনুল ইসলাম, কায়সার কামাল ও এ কে এম এহসানুর রহমান। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এর আগে গত ১৮ নভেম্বর এ মামলায় সাত বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলটি করেন খালেদা জিয়া।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া এ মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ডও স্থগিত করা হয়েছে।

একই সঙ্গে নিম্ন আদালত থেকে এ মামলার নথি তলব করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে মামলার নথি দাখিল করতে হবে। মামলার নথি আসার পর খালেদা জিয়া জামিনের বিষয়টি দেখা হবে বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর নিম্ন আদালতের সাত বছরের সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি জমা দেন তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আবেদনটি সাতশরও বেশি পৃষ্ঠার বলে তিনি জানান।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার অপর তিন আসামিকেও একই দণ্ডাদেশ দেন আদালত।

এ মামলার অন্য তিন আসামি হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। তাঁদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক। বাকি দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত ওই তিনজনকেও অভিন্ন সাজা দিয়েছেন।

এ ছাড়া মামলার পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে উপস্থিত দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে রায়ে যে ৪২ কাঠা জমির ক্রয় নিয়ে মামলার সূচনা, সেই জমিটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ১৪ নভেম্বর এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ।

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছিলেন আদালত। পরে গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট এ মামলায় সাজা বৃদ্ধি করে ১০ বছর করেন।