বাড়বে গ্যাসের দাম, সব মিটার হবে প্রি-পেইড

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সমন্বয়ের অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। এছাড়া গ্যাসের সব মিটার প্রি-পেইড করা হবে বলেও জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের দামটা সমন্বয় করা দরকার। আমি বারবার বলে আসছি। বার্ককে (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি) আমরা গ্যাসের দামের বিষয়টি সাবমিট করেছি। এখন সম্পূর্ণ বার্কের ওপর নির্ভর করছে তারা গ্যাসের দাম সমন্বয় করবে কি-না। প্রাইস সমন্বয়ের জন্য আমরা গত বছর থেকে অপেক্ষায় আছি।

শিল্প ও গৃহস্থালি উভয় ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব মন্ত্রণালয় দিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব জায়গায় কিছুটা সমন্বয়ের জন্য বলেছি। তিনি বলেন, আমরা গত বছরের আগস্ট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করেছি। ১০০ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট), ২০০ এমএমসিএফ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করেছি। এই গ্যাসের মূল্য আমাদের নিজস্ব গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশি। সরকার নিজস্ব গ্যাসের ওপর প্রচুর পরিমাণ সাবসিডি (ভর্তুকি) দেয়। গ্যাসে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো সাবসিডি দেয়া হয়। এটা করা হয় শিল্পকে সহায়তা দেয়ার জন্য। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের দাম আমরা সমন্বয় করতে চাচ্ছিলাম এজন্য যে, গ্যাস আমরা আমদানি করছিলাম এতদিন ধরে। এখানে গ্যাসে আমরা ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছি। এখন সামনে আরও ১৪ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এই টাকাটা আসবে কোথা থেকে? গ্রাহকের কাছ থেকে তো আগের দামে সেই টাকা আসছে না। যদি সমন্বয় না করেন, সেক্ষেত্রে সরকারের সমস্যা দেখা দেবে।
বার্ক মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী দাম সমন্বয় করলেও গ্যাসে সরকারকে সাবসিডি দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শতভাগ (ভর্তুকি উঠিয়ে) করতে চাচ্ছি না। বার্ক টাকাটা সমন্বয় না করলে এই টাকাটা সরকারের কাছ থেকে নিতে হবে। আমরা এখনও অপেক্ষায় আছি। দাম সমন্বয় না করলে সরকারকে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা সরকারকে দিতে হবে চলতি অর্থবছর।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাসাবাড়ি ও আবাসিক ক্ষেত্রে গ্যাস ব্যবহারে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। এটা বরাবরই আমরা বলছি। আমরা একটা বড় প্রকল্প নিচ্ছি ঢাকা শহরসহ সব জায়গায় পুরনো গ্যাস লাইনগুলো উঠিয়ে ফেলে নতুন গ্যাস লাইন করব। সেখানে প্রি-পেইড মিটার বসাবো। দুই লাখ গ্যাসের মিটার সংযোগ গেছে। আমরা আবেদন করেছি জাইকাকে সহযোগিতা করার জন্য, প্রি-পেইড গ্যাস মিটার বাসাবাড়িতে ব্যাপকভাবে একশ পার্সেন্ট দেয়া যায় কি-না সেটার ব্যবস্থা আমরা নিতে যাচ্ছি। কবে নাগাদ এটা করা হবে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা বলা মুশকিল তবে আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব করার জন্য। ঈদে আগের বছরের চেয়ে এবার বিদ্যুতের অবস্থা ভালো ছিল দাবি করেন তিনি। আমরা বলতে পারি আমরা সর্বোচ্চ উৎপাদন করেছি এই সময়ের মধ্যে। প্রায় ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের ওপরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। কিছু ঝড়-বাদল হয়েছে, সেখানে কিছু সমস্যা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার বিষয়ে কিছু সমস্যা ছিল, যেগুলো আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি সেগুলো এ বছর সারিয়ে উঠতে পারব। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবার প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর ফলপ্রসূ ছিল। আমাদের টার্গেট ফুলফিল করার জন্য জাপান একটা বড় সহায়ক শক্তি।

মাতারবাড়িতে যে এনার্জি পোর্ট হচ্ছে সেখানে বিশাল আর্থিক সহযোগিতা ওনারা করে যাচ্ছেন। এবার আরও কিছু অর্থের সহযোগিতা পাচ্ছি। মাতারবাড়িতে এক্সটেনশন প্রজেক্টের জন্য জাপান আরও ২ বিলিয়ন ডলার দেবে বলেও জানান তিনি।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বছরও প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াটের উপরে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জেনারেশনের জন্য সিস্টেমে যোগ করব। আমাদের বড় পরিকল্পনা হচ্ছে ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন। আরও তিনটি বছর লাগবে, সেক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবো। আমাদের অনেক সাব স্টেশন, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল এই প্রকল্পগুলোর সঙ্গে জড়িত। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমাদের চাহিদা হলো বিদ্যুৎ খাতে ২৬ হাজার কোটি টাকার উপরে। জ্বালানি খাতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার উপরে। বিদ্যুৎ খাতে এডিপির বরাদ্দ পেয়েছিলাম ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো। এবার ২৬ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি, সেটাই আমাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সবসহ এবার ২৯ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো বাজেট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে হবে।