কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ৫, বহু হতাহত

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় সেতু ভেঙে আন্তঃনগর ‘উপবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের কয়েকটি বগি খালে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন শাজাহান কবীর চৌধুরী।

সোমবার (২৪ জুন) ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে তিনি বলেন, ‘কুলাউড়া ও মৌলভীবাজার হাসপাতালে মোট ৬৭ জন আহত ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ২০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় পাঁচ জনের মরদেহ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।’

নিহতদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের গুপ্ত গ্রামের বাসিন্দা বারি মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা পারভীন (৪৫) ও জালালপুরের দক্ষিণ সুরমা থানার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভা। এদিকে ভোরেই সাতটি সচল বগি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে দুর্ঘটনাকবলিত উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এছাড়া সেতু ভেঙে লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কুলাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুল মালেক এই তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে, সিলেট থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে রবিবার (২৩ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকার অদূরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট কাজ করছে এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া উদ্ধার অভিযানে স্থানীয়রাও অংশ নিয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিসের হবিগঞ্জ জেলার উপসহকারী পরিচালক শিমুল মোহাম্মদ রফি বলেন, ‘১১টি ইউনিটের ৫৪ জন সদস্য ও ৫টি অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করছে। গুরুতর আহত ২৭ জনের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ও ৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।’

শ্রীমঙ্গল সেক্টরের ৪৬ বিজিবির সহকারী পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, ‘ট্রেন দুর্ঘটনার পর রাত ১টার দিক থেকে বিজিবির ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি দল ঘটনাস্থলে নিয়োজিত রয়েছে।’

এর আগে, রবিবার (২৩ জুন) রাত ৩টার দিকে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় দুটি বগি সেতু ভেঙে খালের পানিতে উল্টে পড়ে গেছে। এছাড়া আরও তিনটি বগি স্থলভাগের সীমানায় লাইনচ্যুত হয়ে পড়েছে। মোট পাঁচটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ সময় ফায়ার সার্ভিসের কুলাউড়া স্টেশন ম্যানেজার অপেন কুমার সিং এই ঘটনায় ছয় জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার উদয় কুশল সিংহ এই ট্রেন দুর্ঘটনায় তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে, রাত পৌনে ৪টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চার জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ১৫-২০ জন আহত রয়েছেন।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ভারী যান চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন ঢাকাগামী যাত্রীরা। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি সিলেট থেকে ছেড়ে যায়।