মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে শঙ্কা নেই

হোটেল থেকে বের হলেন ক্র্যাচে ভর দিয়ে। সামনে তার স্ত্রী জান্নাতুল কাউসার মিষ্টি ছোট্ট একটি লাগেজ হাতে বার্মিংহামের উদ্দেশে রওনা হতে বাসে উঠতে এগোচ্ছিলেন। মাহমুদুল্লাহকে এভাবে দেখা যে আঁতকে ওঠার মতোই। অনেক প্রশ্নই তখন মনে উঁকি দেয়। বিশেষ করে জাতীয় দলের বাইরের মানুষের কাছে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ তারা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানেন না। আর টিম ম্যানেজমেন্ট যখন বিষয়টি গোপন রাখতে চায়, তখন খোঁজখবর নিয়ে খুব কমই জানা যায়।

জানা গেছে, মাহমুদুল্লাহর ডান পায়ের কাফ মাসলের পেশি ছিঁড়ে একটু ক্ষতের সৃষ্টি করলেও ভয়ের কিছু নেই; বরং মিডল অর্ডার এ ব্যাটসম্যান পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘ম্যাচটা আমি খেলতে চাই। চোট নিয়েও খেলতে কোনো সমস্যা হবে না।’

তবে মঙ্গলবার সাউদাম্পটনে বাংলাদেশের যে এক-দু’জন সাংবাদিক ক্র্যাচে ভর দেওয়া মাহমুদুল্লাহকে দেখার পর বুদ্ধি করে মোবাইলে একটা ছবি তুলে ফেললেন, বাংলাদেশের মিডিয়া ও টাইগার সমর্থকদের কাছে থেকে ধন্যবাদ পেতেই পারেন তারা। কিন্তু এ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় টাইগার সমর্থকদের মধ্যে ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটা মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়, বাস্তবে ভয় পাওয়ার মতো তেমন কিছু হয়নি তার। বরং টিম ম্যানেজমেন্টের নির্ভরযোগ্য এক কর্মকর্তার কাছ থেকে যেটা জানা গেছে, চোটাক্রান্ত পেশিকে চাপমুক্ত রাখতেই ফিজিও থিলান চন্দ্রমোহনের পরামর্শে ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটছেন মাহমুদুল্লাহ। পরের ম্যাচে তাকে খেলার মতো ফিট করে তুলতেই এই ব্যবস্থাপত্র দেওয়া। মাহমুদুল্লাহর আত্মবিশ্বাস দেখে জাতীয় দলের প্রায় সবারই বিশ্বাস, চোট পরিচর্যা করে ভারতের বিপক্ষে ঠিকই খেলতে নামবেন এ ব্যাটসম্যান।

সোমবার সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের সময় মাহমুদুল্লাহর পেশিতে চোট লাগে। ওই অবস্থাতেই মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটিতে সঙ্গ দেন, যেখানে তার অবদান ২৭ রান। অবশ্য ফিল্ডিংয়ের সময় মাঠে ছিলেন না তিনি। সাব্বির রহমান বদলি ফিল্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় চোটের গভীরতা জানার জন্য আক্রান্ত কাফ মাসলের স্ক্যান করানো হলে তাতে গ্রেড ওয়ান টিআর ধরা পড়ে। এ ধরনের চোট সারতে কম করে হলেও ১৫ দিন লেগে যায়। মাহমুদুল্লাহ সেখানে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে চোট পরিচর্যা করতে সাত দিন সময় পাচ্ছেন। এই সময় পরের ম্যাচের ভেন্যু বার্মিংহামে দলের সঙ্গে থাকবেন তিনি। ফিজিও থিলান চন্দ্রমোহন তাকে নিয়ে প্রতিদিনই কাজ করবেন বলে জানায় টিম ম্যানেজমেন্ট। মাশরাফি বিন মুর্তজাও এ কারণে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের খেলার ব্যাপারে আশাবাদী, ‘ফিজিও তাকে নিয়ে কাজ করবেন। এক সপ্তাহ সময় হাতে পাব, আশা করি সে ঠিক হয়ে যাবে।’

যদিও টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে জানা গেছে, ম্যাচের আগের দিন ১ জুলাই ফিটনেস পরীক্ষা দিতে হবে মাহমুদুল্লাহকে। সেখানে মোটামুটি ব্যাট করার মতো নিজেকে ফিট প্রমাণ করতে পারলেই একাদশে রাখা হতে পারে। তবে বিকল্প বা বদলি ফিল্ডার প্রস্তুত রাখতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। এক্ষেত্রে কৌশলগত যতটা সুবিধা নেওয়া সম্ভব, তা নেওয়ার চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং পেলে ভালো হয়। ব্যাটিং শেষ করে ব্যথার কারণ দেখিয়ে ফিল্ডিং থেকে বিরত থাকতে পারবেন তিনি। আর পরে ব্যাটিং পেলে প্রথমে ফিল্ডিংয়ে করার জন্য মাঠে নামতে হবে মাহমুদুল্লাহকে। নিরাপদ জায়গায় থেকে কিছুটা সময় ফিল্ডিং করে ড্রেসিংরুমে ফিরে আসার চেষ্টা করবেন তিনি। টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট সব কৌশল ও বিকল্প ভেবে রেখেছে মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে।