দেশে আজ ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন- গুম, খুন, লুট, নারী ও শিশুধর্ষণ, গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার মতো বর্বরোচিত ঘটনায় দেশে আজ ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকার দিনের ভোট রাতে নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা বলতে কিছুই নেই। শেয়ারবাজার লুটেরাদের হাতে। গত সাতদিনে শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। এ সরকারের হাতে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধারাও নিরাপদ নয়।

তিনি বলেন, সরকার এখন খালেদা জিয়া আতঙ্কে ভুগছে। তারা জানে খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবে। তাই তাকে মুক্তি দিতে ভয় পাচ্ছে।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় ঐতিহাসিক শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশ শুরুর পরপরই হালকা বৃষ্টিতে মঞ্চের সামনে থাকা কর্মীরা হাদিস পার্কের বিভিন্ন গাছের নিচে জড়োসড়ো হয়ে অবস্থান নেন ও নেতাদের কথা শোনেন। অনেককে ছাতা, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন মাথায় দিয়ে অবস্থান নিতে দেখা যায়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, সরকারের বাধা, গাড়ি ভাঙচুর, নেতাকর্মীদের মারধর উপেক্ষা করেও খুলনা বিভাগের ১০ জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী জাতীয় নেতাদের বক্তব্য শোনেন। এবং সেখানে একটিই স্লোগান ছিল ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘শেখ হাসিনার বন্দিশালায় লাথি মারো, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করো’। এ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে হাদিস পার্ক।

মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন নির্বাচনে জনগণের আস্থা নেই। দেশে বারবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। স্বৈরাচারীভাবে দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়েছেন। গণতন্ত্রের মা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী আজ নির্জন কারাগারে বন্দি করে দেশের মানুষের কথা বলার ও ভোটের অধিকারকে কেড়ে নেয়া হয়েছে।

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিদেশে গিয়ে আপনার চোখের চিকিৎসা নিয়েছেন- এটা ভালো খবর। আমাদের বিশ্বাস এর মাধ্যমে আপনার সুদৃষ্টি ফিরে আসবে। যার মাধ্যমে জনগণের চাওয়া-পাওয়া সব কিছুই বুঝতে পারবেন। জনদাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবেন।

দেশের বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে মির্জা ফকরুল বলেন, প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের ভয় দেখিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার লেশমাত্র নেই। আদালতের একটি রায়ের মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে জনগণের ভোটের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সরকারি দলের এমপি জড়িত। এটা জানাজানি হওয়ার পরে নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তারের পর ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে রামপালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করে সুন্দরবনকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কাছে প্রিয়া সাহার বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমে সরকারি দলের নেতারা এর সমালোচনা করেছিল। যখন এই মহিলা বললেন তার বক্তব্যই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। তখন সরকার তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার কথা বলছে। দেশবাসী জানতে চায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই কি প্রিয়া সাহার বক্তব্য। এসব দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার নিজের গদিকে রক্ষা করার জন্য এক লাখ মামলায় ২৬ লাখ মানুষকে আসামি করেছে। বিরোধী দলের ৫০০ নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। তাদের সন্তান ও পরিবার-পরিজন এই সরকারের পতনের অপেক্ষা করছে।

বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। যে কারণে আমরা ওই অঞ্চলে সভা-সমাবেশ স্থগিত রেখে নেতাকর্মীদের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগরী সভাপতি সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং জেলার সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খানের পরিচালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী আহামেদ রুমী, কবির মুরাদ, যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন।
নির্বাহী কমিটির সম্পাদক ও সহ- সম্পাদকবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সাবেক ছাত্র নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান খান বাবু, সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ-ধর্ম সম্পাদক অমলিন্দু দাস অপু, সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলি।

বকুলের শোডাউন: বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শহীদ হাদিস পার্কের প্রধান ফটক থেকে এক বিশাল মিছিল সমাবেশস্থলে আসে। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি ডাকসু নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল। এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর শিববাড়ি মোড় এলাকায় বকুলের নির্বাচনী এলাকা খুলনা-৩ আসনের খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানার নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকে। ৩টার পরে তিন থানা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি সংবলিত নানা রঙের ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে সমাবেশস্থল হাদিস পার্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তখন নেতাকর্মীদের মুখে স্লোগান ছিল বকুল ভাইয়ের খুলনায় শেখ হাসিনার ঠাঁই নেই, খুলনার মাটি বকুল ভাইয়ের ঘাঁটি, বকুল ভাইয়ের নেতৃত্বে মুক্ত হবে খালেদা জিয়া। মিছিলটি সমাবেশস্থলে আসলে মাইকের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে টোটাল সমাবেশস্থল মিছিলে রূপ নেয়।