যশোরে শ্যামলছায়ায় জৈব পদ্ধতিতে ফল ও মাছের চাষ

যে মুহুর্তে দেশে ফরমালিন ও বিষযুক্ত ফল মুল এবং তরি তরকারিতে বাংলাদেশে জনগনের স্বাস্থ্য চরম ঝুঁকির মুখে সেই মুহুর্তে স্বাস্থ্য উপযোগী ফলমুল ও তরি তরকারি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উদাহরনের মাইল ফলক গড়লেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সালাহ উদ্দীন মিয়াজী। যশোর শহর থেকে একটু দুরে নির্জনে একটি পার্ক। নাম শ্যামলছায়া। এখানে নানা ফলের সাথে মাছের পোনা চাষ করে প্রশংসিত হয়েছেন চাষী। আর সবটাই জৈব পদ্ধতিতে। এর উদ্যেক্তা সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব:) সালাহ উদ্দীন মিয়াজী। তিনি যশোর জেলার সদর উপজেলার চাচঁড়া ইউনিয়নের রুদ্রপুর এলাকায় প্রশংসিত কৃষি খামারটি গড়ে তুলেছেন। এই খামারে মাছ চাষের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ফলজ ও বনৌষধি গাছের বানিজ্যিক চাষ। এখানে ড্রাগন ফল চাষ হচ্ছে। রয়েছে মধ্য প্রাচ্যের খেজুর বারহই। এখানে পাওয়া যাবে চায়নিজ কমলা। চাষ হচ্ছে এ্যাভোকাডো ফল। আরো আছে রামবুটাম, পার্সিমন, ভিয়েতনামি নারকেল। দেশী ফল আম-কাঁঠাল তো আছেই। সাথে অন্তত ১০টি পুকুরে মাছের পোনা উৎপাদন হচ্ছে। দেশী-বিদেশী ফলের বাহারি আয়োজন এখানে শ্যামল ছায়া মনোরম পার্কের ব্যানারে।

শ্যামল ছায়া নামটি যেমন বাহারি, তেমনি উদ্যেক্তার ফসলের রকমারি আয়োজন। এর রুপকার যশোর শহরের রেলগেট তেতুলতলার বাসিন্দা ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা , সাবেক এমপি, বাংলাদেশ এ্যাক্রিয়েশন বোর্ড (শিল্প মন্ত্রনালয়) এর সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাড.মঈনুদ্দীন মিয়াজীর বড় পুত্র সালাহ উদ্দীন মিয়াজী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনা প্রধান হওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম ছিল অনেক উপরে। তার আগে গন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সামরিক সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অতি স্নেহ ভাজন। অবসরের পর চাইলে হতে পারতেন রাষ্ট্রদূত। কিন্ত তা না হয়ে তিনি হয়েছেন বাংলার চাষী। সালাহ উদ্দীন মিয়াজী জানালেন সৃষ্টিকর্তার প্রত্যক্ষ নজর রয়েছে গাছ পালা ও মাছের ক্ষেত্রে। তিনি তাই কৃষি সেবার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার গুনগান করতে চান। কৃষিতে সৃষ্টিকর্তার বড় গুনাবলী বিদ্যমান। তাছাড়া পরিবেশের প্রান অক্সিজেন সরবরাহ হয় গাছ ও পানি থেকে। জানালেন জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে তিনি অনাবিল সুখ পান। তাছাড়া প্রকৃতির সেবা করে তিনি সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট মানুষের জন্য কিছু করতে চান। রয়েছেন ওরিয়ন গ্রুপের শীর্ষ পদে। তাতে তার কৃষি কাজে কোন বাধাঁ আসেনি। তিনি রাত তিনটার সময় পোনা মাছ ধরতে পুকুরে চলে আসেন শহরের বাড়ি থেকে ৮/১০কিলো দুরের কৃষি খামারে। তার কর্মচারিরা বলেন স্যারের সাথে পারা মুশকিল। সবার আগে তিনি পুকুর পাড়ে এসে হাজিন হন। তার রয়েছে মনোসেক্স তেলাপিয়া উৎপাদনের হ্যাচারী। পুকুরে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। এর মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, পুটি, পাঙ্গাশ পোনা। তবে তার কৃষি খামারের তারকা ফসল অবশ্যই ড্রাগন। ক্যাকটাস প্রজাতির এই ফসলের অনেক প্রাপ্তি। ড্রাগন ফল ডায়াবেটিস, ক্যান্সার সহ বড় বড় আটটি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার হয়। রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায় তা। এক একর জমিতে ৬০০ পিলার স্থাপন করা যায়। প্রতিটি পিলারে ১০ কেজি করে ড্রাগন ফল উৎপাদন হবে। অর্থাৎ এক মৌসুমে এক একরে ছয় টন ড্রাগন উৎপাদন সম্ভব। যার বর্তমান বাজার দর ১৮ লাখ টাকা। যশোরে তার ড্রাগন গাছের বয়স দুই বছর। বছরে ছয় বার ফলন হয়। একটি চারা ২০বছর ফলন দেয়। অর্থাৎ একবার ড্রাগন চারা রোপণ করলে ২০বছর উৎপাদন সম্ভব। ঘুরে ঘুরে তিনি এই প্রতিবেদক ও তার সাথীদের তার যশোরের কৃষি খামারের চাষাবাদ দেখান। শোনান কৃষির আশার অনেক কথা। বললেন কৃষি থেকে যে মানষিক সুখ পাওয়া যায় তা আর কিছু থেকে সম্ভব নয়। জানান তার কৃষি খামারের অর্জনে রয়েছে নিজের ও ১৫/১৬ জন কর্মচারির আন্তরিক কাজ। নিজের উদ্যেগের প্রচারে তার লুকোচুরি রয়েছে যথেস্ট। কিন্ত মানুষ আজ হোক আর কাল হোক তার কৃষি সফল খামারের কথা সকলে জানবেই। এখনি দুর দরান্ত থেকে মানুষজন তার চাষাবাদ ও ফসল উৎপাদন দেখতে আসছে। এই ফাকে বলে রাখা ভাল তার খামারের কাঠাল ও আম গাছে বেজায় ফলন হয়েছে এই মৌসুমে। সালাহ উদ্দীন মিয়াজীর কৃষি খামার দেখে অনেকেই উচ্ছসিত। এর মধ্যে রয়েছেন ২০১৮ সালের কৃষিতে বঙ্গবন্ধু পুরষ্কার প্রাপ্ত বৃক্ষপ্রেমিক আব্দুল ওয়াহিদ সরদার। কৃষি উদ্যেক্তা সালাহ উদ্দীন মিয়াজী তার গাছ থেকে পেরেক তোলা কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন নিজের খামারের দেখাতে দেখাতে। কৃষি উদ্যেক্ত মনে করেন ভালো কিছু সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সেখানে অর্ন্তভূক্ত করে দেশ গঠনে নিয়োজিত করার তাগিদ থাকতে হবে প্রত্যেক বাঙালীর।

সালাহ উদ্দীন মিয়াজী বলেন ময়মনসিংহের ভালুকায় বন্ধুদের সাথে তিনি ৫০০ একর জমিতে ড্রাগন ফলের খামার গড়তে চলেছেন। যশোরের শ্যামল ছায়া কৃষি খামারে সেই লক্ষ্যে ড্রাগন চারা উৎপাদন হচ্ছে। ড্রাগন ছাড়াও এই খামারে বারহই জাতের খোরমা খেজুর ধরেছে মধ্য পাচ্য থেকে সংগ্রহীত খেজুর গাছে। ৫/৬ বছরের একটি গাছে খেজুর হবে। এক সিজনে একটি গাছ থেকে ২০০ কেজি খেজুর উৎপাদন সম্ভব। এক পাশে ড্রাগন বাগান এক পাশে পুকুর এবং পুকুরের পাড় ধরে বারহই খেজুরের চারা, চায়নিজ কমলা, এ্যাভোকাডো, রামবুটাম, পার্সিমন ও ভিয়েতনামী নারিকেল চারা রোপন করা হয়েছে। মনোমুগ্ধকর এক কৃষি খামার। যত দুরে যাক না কেন চোখ জুড়িয়ে যায়। তার খামারে চায়নিজ কমলা ধরেছে। মাছ চাষ বা ফসল যায় চাষ হোক না কেন তা হচ্ছে জৈব পদ্ধতিতে। এটা বড় আশার কথা। তিনি মনে করেন বিশ্ব কৃষি পর্যায়ে জৈব পদ্ধতি একটি মৌলিক ব্যবস্থা। এদেশের জাতীয় পর্যায়ে জৈব পদ্ধতির কৃষি চাষাবাদে উদ্যেগ নিতে হবে। তানা হলে বিশ্ব কৃষি বাজারে বাংলাদেশের টিকে থাকা সম্ভব নয়। পাশাপাশি তা সকলের জন্য স্বাস্থ্যকরও বটে।